• ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জেলা পরিষদের মসনদ লুৎফুরের : অভিজ্ঞতার কাছে তারুণ্যের পরাজয়

প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬

রফিকুল ইসলাম কামাল
মসনদে তিনি ছিলেন। মাঝখানে মাসখানেক নির্বাচনী ডামাঢোল। এরপর ফের সেই মসনদে তিনিই বসছেন। এডভোকেট লুৎফুর রহমান। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রবীণ এ নেতা দলীয় সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে ২৪৩ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়মাল্য পড়েছেন তিনি। লুৎফুরের অভিজ্ঞতার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন শিক্ষাবিদ এনামুল হক সরদার।
সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের মৃত্যুতে প্রশাসকের মসনদে বসেন লুৎফুর রহমান। প্রায় বছরখানেক তিনি এ পদে দায়িত্বে থাকার পর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক শোরগোল শুরু হয়। প্রায় মাসখানেক আগে প্রশাসকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন লুৎফুর। দলীয় ব্যানারে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান পদে হয়েছেন বিজয়ী। যে মসনদে তিনি ছিলেন, সেটা থাকছে তারই। তবে পার্থক্য এটুকুই, আগে পদের নাম ছিল ‘প্রশাসক’, নির্বাচনের পর হচ্ছে ‘চেয়ারম্যান’।
গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সিলেটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটের ১৫টি ওয়ার্ডে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন শেষ হয়। ভোটগ্রহণ শেষে গণনায় একে একে আসতে থাকে লুৎফুরের এগিয়ে থাকার খবর। ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতেই জয় পেয়েছেন তিনি। ২টি ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছেন এনামুল হক সরদার। অপর ওয়ার্ডে লুৎফুর ও সরদার ছিলেন সমানে সমান। সবমিলিয়ে লুৎফুর রহমানের বাক্সে ঢুকেছে ৭৯৬ ভোট এবং এনামুল হক সরদারের বাক্সে পড়েছে ৫৫৩ ভোট। জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি অপর দুই প্রার্থী- জিয়া উদ্দিন আহমদ লালা ও ফখরুল ইসলামের ভোটের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। অবশ্য এ দুই প্রার্থী নির্বাচনী দৌড়ে শুরু থেকেই ছিলেন বেশ পিছিয়ে।
যে ওয়ার্ডে যতো ভোট পেলেন লুৎফুর: আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এডভোকেট লুৎফুর রহমান ১নং ওয়ার্ডে ৭৭, ২নং ওয়ার্ডে ৩৯, ৩নং ওয়ার্ডে ৪২, ৪নং ওয়ার্ডে ৬২, ৫নং ওয়ার্ডে ৩৩, ৬নং ওয়ার্ডে ৪১, ৭নং ওয়ার্ডে ৫৭, ৮নং ওয়ার্ডে ৫০, ৯নং ওয়ার্ডে ৫৩, ১০নং ওয়ার্ডে ৫৩, ১১নং ওয়ার্ডে ৬৯, ১২নং ওয়ার্ডে ৬৫, ১৩নং ওয়ার্ডে ৬২, ১৪নং ওয়ার্ডে ৪৯ এবং ১৫নং ওয়ার্ডে ৪৪ ভোট পেয়েছেন।
যে ওয়ার্ডে যতো ভোট পেলেন সরদার: শিক্ষাবিদ এনামুল হক সরদার ১নং ওয়ার্ডে ১৬, ২নং ওয়ার্ডে ১৩, ৩নং ওয়ার্ডে ১৬, ৪নং ওয়ার্ডে ৪০, ৫নং ওয়ার্ডে ৭২, ৬নং ওয়ার্ডে ৫১, ৭নং ওয়ার্ডে ৩২, ৮নং ওয়ার্ডে ৫০, ৯নং ওয়ার্ডে ৫০, ১০নং ওয়ার্ডে ৩৫, ১১নং ওয়ার্ডে ৩০, ১২নং ওয়ার্ডে ৩৯, ১৩নং ওয়ার্ডে ২৯, ১৪নং ওয়ার্ডে ৪৩ এবং ১৫নং ওয়ার্ডে ৩৭ ভোট পেয়েছেন।
লুৎফুরের জয়ের নেপথ্যে অভিজ্ঞতা: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তরুণ শিক্ষাবিদ এনামুল হক সরদার মূলত লুৎফুর রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও অভিজ্ঞতার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন। ষাটের দশকে ছাত্রলীগের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে অভিষেক ঘটে লুৎফুর রহমানের। ১৯৭২ সালে তিনি ছিলেন গণপরিষদের সদস্য। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক উত্থান-পতনের পথ পেরিয়ে এসেছেন লুৎফুর রহমান। বর্তমানে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রবীণ এ নেতা। এছাড়া তিনি সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে, এনামুল হক সরদার লুৎফুর রহমানের তুলনায় একেবারেই তরুণ। তার রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। শিক্ষাবিদ হিসেবে সিলেটে কিছুটা পরিচিতি থাকলেও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকায় সাধারণ মানুষের কাছেও অপরিচিত ছিলেন সরদার। তবে নির্বাচনী ডামাঢোলের শুরুতেই মাঠে নেমে পড়ায় শুরুর দিকে বেশ এগিয়ে ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লুৎফুর রহমান শুরুতে নির্বাচনী দৌড়ে পিছিয়ে থাকলেও শেষ অবধি নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে তরুণ সরদারকে পেছনে ফেলে চূড়ান্ত ফলাফল নিজের ঘরে তুলেছেন।