• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বকাপের ডায়রি (৩): ইডেনের গ্যালারি যেন এক টুকরো পাকিস্তান!

প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬

-মান্না চৌধুরী
ইডেন গার্ডেনের আশপাশ জুড়েই কলকাতার ক্রীড়াঙ্গনের নামীদামী সব ক্লাব। ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহ্য কলকাতা মোহামেডান, মোহনবাগান, ইষ্টবেঙ্গল আছে এই তালিকায়। কলকাতা প্রেসক্লাব আর স্পোর্টস জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনও কাছাকাছি। যেন ইডেনকে ঘিরেই কলকাতার স্পোর্টস আর প্রেস মিলেিেমশে একাকার। বিশ্বকাপের মিডিয়া অ্যাক্রিডিটেড যারা তাদেরকে ম্যাচের দিন আরেক যায়গায় এসে লাইনে দাঁড়াতে হয়। কেবল অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়েই খেলা কাভার করা যায়না। ম্যাচ ডে টিকিট নামে আরেকটা কার্ড সংগ্রহ করতে হয় প্রতিটা ম্যাচের আগে। ১৬ মার্চ আমরা তাই আগেভাগেই কলকাতা স্পোর্টস জার্নালিষ্ট ক্লাবে এসে হাজির। এখান থেকেই দেয়া হয় ম্যাচ ডে টিকিট আর ফুড কুপন। সেদিন বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের জন্য তৈরি ইডেন গার্ডেন। কোয়ালিফাই রাউন্ডে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ধর্মশালা থেকে কলকাতায় এসেছে বাংলাদেশ দল। ২০০৯ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের সামনে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ। মাঠের দুই অংশে দুই দল। চললো প্রায় আধঘন্টার ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং অনুশীলন। প্রস্তুতি শেষে অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পতাকা হাতে মাঠে ঢুকলো আট কিশোর। একটু পরেই শহীদ আফ্রিদি আর মাশরাফি বিন মর্তুজাকে সঙ্গে করে মাঠে আসলেন ম্যাচ রেফারি। ইডেনের বুকে বাইশ গজে কয়েন ছুঁড়ে মারলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। স্বপ্নের ইডেনে এই প্রথম মাশরাফি আর তার দল। সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক তারকা সাংবাদিকের সাথে আমি আর আহবাব মোস্তফা খান। জাতীয় সঙ্গীত পর্বে গলা মেলালাম গর্বে বুক ভরে। পাকিস্তানের সাথে খেলা বলে ইডেনের গ্যালারী বাংলাদেশের হয়েই কথা বলার কথা। কিসের কি? গ্যালারীতে দেখি শুধুই পাকিস্তানের পতাকা! প্রেসবক্সে বসা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের সাংবাদিকদের চোখেমুখে তখন কেবলই বিস্ময়। রহস্যটা ভাঙলো ভারতীয় এক সাংবাদিকের তথ্যে-বিহারী দর্শকরা নাকি ইডেনের গ্যালারীর বড় অংশ জুড়ে। তারা কখনোই ভারতকে সমর্থন করেনা। ভারত ভূখন্ডে থেকে ভারতকে সমর্থন করে না মানে তারা সবসময় পাকিস্তানের সমর্থক! গ্যালারিতে পাকিস্তান পাকিস্তান ধ্বনির মাঝেই ফিল্ডিং করতে নামলো বাংলাদেশ। কিন্তু এ কোন বাংলাদেশ? বোলিং, ফিল্ডিংয়ে দীনহীন ভাব। স্বপ্নের ইডেনে আবেগতাড়িত হয়েই কিনা মাশরাফি, তাসকিন, অল-আমিনরা রান বিলিয়ে দিলেন অকাতরে। পাকিস্তান উঠলো রান পাহাড়ে। ১২০ বলে ২০২ রানের টার্গেট। এমন কঠিন সমীকরণে মোহাম্মদ আমেরের দুর্দান্ত এক ডেরিভারিতে শুরুতেই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের স্টাম্প উড়িয়ে দেয়া আমেরের সেই বলটা আমার দেখা অন্যতম সেরা। তামীম, সাব্বির আশা জাগিয়েও পারেননি বুড়ো আফ্রিদির কারণে। এই দুজন উইকেটে থাকলে ফলটা হয়তো পাল্টে যেত, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাসের দিনটা  (১৬ই মার্চ) যে ছিল শহীদ আফ্রিদির! ব্যাট হাতে ঝড়ো ৪৯ রানের পর তামীম, সাব্বিরের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ৫৫ রানের পরাজয় উপহার দিলেন পাকিস্তান কাপ্তান। এমন হারের পরও বিচলিত নন বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন। এখানেই মাশরাফি আলাদা হয়ে থাকেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সাথে ছবি তুললেন। কথা বললেন, হাসলেন, হাসালেন। পরদিন ১৭ মার্চ শ্রীলংকা-আফগানিস্তান ম্যাচের কনফার্মেশন মেইল চলে এসেছে আমাদের মেইল ঠিকানায়। আপনার বাছাই করা কোন কোন ম্যাচ কাভার করার সুযোগ পাচ্ছেন, সেটা ম্যাচের আগে জানিয়ে দেয়া হয় মেইলে। শ্রীলংকার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি আফগানিস্তান। একপেশে ম্যাচে অবশ্য দর্শক আগ্রহ কেড়ে নিলেন একজন, ইনজুরির কারণে শ্রীলংকার একাদশে তার নাম নেই। তবু দলের অন্যদের সঙ্গে অনুশীলনে মাঠে আসলেন। উইকেটে ঝড় না তুলেও দর্শক আকর্ষণের কেন্দ্রে লাসিথ মালিঙ্গা। মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় গ্যালারী থেকে হাত বাড়িয়ে হাতে হাত মেলাতে দর্শকের কি প্রাণপন চেষ্টা! তবে আমার আকর্ষণ ছিল অন্য দুজনের ওপর। একজন ইনজামাম-উল-হক আর আরেকজন এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। কাকতালীয়-আমার চাওয়াতেই কিনা ম্যাচ শেষে দুজন এলেন সংবাদ সম্মেলনে! ইনজামামের ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছি। অসাধারণ নেতৃত্বগুন, সময়ের প্রয়োজনে কত গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস, বাহারী সব বাউন্ডারি আর অবাক করা রানআউট গ্রেট ইনজামামের পরিচিতি তো এমনই। খেলা ছেড়েছেন সেই কবে। এখন তিনি আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের কোচ। সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তার পিছু নিলেন কলকাতার জনপ্রিয় দৈনিক আজকালের জনপ্রিয় ক্রীড়া সাংবাদিক দেবাশিস দত্ত। আমিও ছুটলাম সেদিকে। দোতলায় নেমে দেবাশিস দাদা কথা বলতে শুরু করেন পাকিস্তানি গ্রেটের সাথে। দু’জনের কথা শেষে সুযোগ নিলাম। ছবি তোলার আগ্রহ দেখাতেই জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমার হাতের সেল ফোনটা নিয়ে ছবি তুলে দিলেন আফগানিস্তান দলের মিডিয়া ম্যানেজার। সাবেক গ্রেটের সঙ্গে ছবি তোলার পর পেয়ে গেলাম শ্রীলংকান অধিনায়ককেও। ইনজামাম যেমন সহজ, সরলতার প্রতীক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও তাই। সেল ফোনের ক্লিক ক্লিক শব্দে লংকান অলরাউন্ডারের সাথে সাক্ষাতটা স্মরণীয় হয়ে রইলো।