• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বর্ষায় নৌকা আর শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো!

প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬

শাকির আহমদ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
বর্ষায় নৌকা আর শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো একমাত্র ভরসা মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মনু নদী তীরবর্তী শরীফপুর, হাজীপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতুর অভাবে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে রাজাপুর খেয়াঘাট দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন এসব এলাকার জনসাধারণ ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। সেতুর অভাবে শরীফপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের লোকজন উপজেলা সদরে আসতে হলে অতিরিক্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে আসতে হয়। এছাড়া জরুরি কোন অসুস্থ রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হলে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এ এলাকার মানুষদের। সেতুর অভাবে এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। এছাড়াও শিক্ষা, কৃষি, অর্থনৈতিক দিক দিয়েও পিছিয়ে রয়েছে এই জনপদটি। এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও কার্যত এর কোন বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সরেজমিনে উপজেলার রাজাপুর খেয়াঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মনু নদীর উপর নির্মিত ৩০০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো দিয়ে অনেকটাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন শরীফপুর ও হাজীপুর এই দুই ইউনিয়নের আন্দ্রকোনা, মাদানগর, আলীনগর, আলীপুর, ভূইগাঁও, নিশ্চিন্তপুর, সুখনাভি, দত্তগ্রামসহ ৩০টি গ্রাম ও আশপাশ এলাকার লক্ষাধিক জনগণ। এসব গ্রামে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ না থাকায় নদীর ওই পারে পার্শ্ববর্তী পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করতে হয় কয়েক সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীদের। এসকল এলাকার বাসিন্দা ও পৃথিমপাশার গজভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ডলি বেগম, নাসিমা বেগম, ফাতেহা বেগম, সুলতানা বেগম, সাবিনা ইয়াছমিন, তাসলিমা বেগম, জলি জানান, প্রতিদিনই স্কুল যাওয়ার জন্য খেয়াঘাটে শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো এবং বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে আমাদের নদী পার হতে হয়। সাঁকো পার হওয়ার সময় পা পিছলে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বর্ষাকালেও নদীর পানির ¯্রােত বেশি থাকলে নৌকা দিয়ে নদী পার হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওই সময় আমাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকে। এতে করে পড়াশুনায় মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। আশেপাশে কোন স্কুল না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই সাঁকো দিয়ে নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। তারা আরও বলেন, নদী পারাপারের জন্য খেয়াঘাটের ইজারাদারকে প্রতিবছর এক হাজার টাকা অথবা সমপরিমান অর্থের ধান দিতে হয়। স্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য এই টাকা দেওয়া সম্ভব হলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য এই খরচ বহন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। নদী পারাপারে জীবনের ঝুঁকি ও অতিরিক্ত খরচের জন্য অনেকেই পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবার খেয়াঘাট পার হতে ঘাটের ইজারাদারকে জনপ্রতি ৫ টাকা করে দিতে হয়। এইসব গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সাঁকো দিয়ে উপজেলা সদর পার্শ্ববর্তী রবিরবাজারসহ স্থানীয় হাটগুলোতে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার অধিক রাস্তা ঘুরে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যেতে হয়। এতে যেমন পণ্য পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পায় তেমনি সময়ও বেশি লাগে বাজারে পৌঁছাতে। তাছাড়া এলাকার কেউ দুর্ঘটনার শিকার কিংবা গুরুতর অসুস্থ হলে উপজেলার হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম দুর্ভোগে পড়েন। সময়মত হাসপাতালে না নিতে পারায় অনেকেই পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। তারা আরও জানান, বিভিন্ন সময় কুলাউড়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা এই এলাকায় মনু নদীর উপর সেতুসহ সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্র“তি দিলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের দাবি রাজাপুর এলাকায় সেতু নির্মাণ হলে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি শিক্ষা, কৃষি শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে। জনপ্রতিনিধসহ সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত জানান, মনু নদীর রাজাপুর এলাকায় সেতুর জন্য এই এলাকার জনসাধারণের দুর্ভোগের ব্যাপারটি আমাদের জানা। ওই এলাকায় সেতু নির্মাণের জন্য ডেভলপমেন্ট প্রোপজাল প্রজেক্ট  (ডিপিপি) আগামী দুই মাসের মধ্যে তৈরি করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩০ মিটার হবে এবং ডিজাইনের কাজ চলছে, সেটি পেলে নির্মাণের ব্যয় নিরূপণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, একটু দেরি হলেও সেতুটি নির্মাণ করা হবে এবং খুব সম্ভব আগামী বছরের  (২০১৭ সালের) শেষের দিকে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে।