জৈন্তাপুর সংবাদদাতা
প্রকৃতির বিমোহিত স্বর্গরাজ্যে এবার মানুষের হানা। আর তাতেই পাল্টে যাচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব রূপ। প্রতিনিয়ত হামলার পদভারে মা প্রকৃতিও এখন অনেকটা ক্লান্ত। দেশব্যাপী পর্যটকদের নিকট পরিচিত এ স্বর্গরাজ্যের নাম জৈন্তা। এখন সেখানে প্রতিদিন মানষের আনাগোনায় সেই স্বর্গরাজ্য অচিরেই শ্রীহীন হয়ে উঠবে-এমনটাই আশংকা করেছেন স্থানীয় লোকজন।
সিলেটের পান, পানি ও নারী খ্যাত জৈন্তাপুর উপজেলার রাজা বিজয় সিংহের স্মৃতি বিজড়িত লাল শাপলার স্বচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন জাতীয়, স্থানীয় এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারের পরদিন থেকে দিন দিন পর্যটকদের আনা-গোনা বৃদ্ধি হলেও কমতে শুরু করছে লাল শাপলাসমেত সমৃদ্ধ জলাশয়। মাস দিনের মধ্যে শেষ হয়ে পড়বে এই লাল শাপলা। পর্যটক ও ভ্রমন পিপাসুদের দাবি বিলের লীজ বাতিল করে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমন পিপাসুদের জন্য বিলগুলো সংরক্ষণ করার।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের কল্যানে যখন সরজমিনে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওর এলাকার ৪টি বিলে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা লাল শাপলার অজানা কাহিনী এখন দেশ-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পরিচিতি লাভ করে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে অগনিত পর্যটদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে জৈন্তিয়ার ৪টি বিল। লাল শাপলার রাজ্যে কাক ডাকা ভোর হতে সমাগম ঘটতে থাকে দেশের নানা প্রান্ত হতে ছুটে আশা পর্যটকদের। পর্যটকরা নিজেদের সকল প্রেম ভালবাসা কিছু সময়ের জন্য বিলিয়ে দেয় লাল শাপলার মায়াবী হাঁসির কাছে। সাধারণত সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা দুটি কারণে পর্যটকদের কাছে আর্কষনীয় থাকার পরেও মিডিয়ার কল্যানে পর্যটকদের খাতায় নতুন করে যোগ হল জৈন্তিয়ার লাল শাপলার (ডিবি, হরফকাটা, কেন্দ্রি ও ইয়াম) ৪টি বিল। ২০১৫ সনের নভেম্বর মাসে দেশের বহুল প্রচারিত জাতীয় একটি দৈনিকের জন্ম বার্ষিকীতে কাভার পৃষ্ঠার স্বচিত্র প্রতিবেদন এবং ২০১৬ সনের স্থানীয় জাতীয় এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ৪টি বিল নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে গোটা দেশসহ আর্ন্তজাতীক অঙ্গনে পর্যটনের একটি অপার সম্ভাবনার স্থান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে এই বিলগুলি। বর্তমানে এক নজর প্রাকৃতিক আনন্দ উপভোগের জন্য দেশের নানা প্রান্ত হতে অগনিত পর্যটকদের সমাগম হলেও কমে যাচ্ছে লাল শাপলা। সরকারী লীজভুক্ত বিল হওয়ার কারনে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন প্রতি বৎসর বিল গুলো লীজ প্রদান করে থাকেন। যার ফলে মৎস্যজীবি সংগঠন বিলগুলো ফিসিংয়ের জন্য লীজ গ্রহণ করে পানি সেচের মাধ্যমে মাছ আহরণ করে। বর্তমানে মাছ আহরণের মৌসুম হওয়ায় ইজারা গ্রহিতা বিলের মাছ ধরছেন। যার কারণে ৪টি বিলের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রি বিলটি ৫০শতাংশ পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বিলটির শাপলা মরে যাচ্ছে। আগামী ১মাসের মধ্যে ক্রমান্বয়ে বাকী ৩টি বিল সেচ দেওয়া হবে। তাতে লাল শাপলা আর ৬ মাসের জন্য পাওয়া যাবে না। পুনরায় ২০১৭ সনের আগষ্ট মাস হতে বিলগুলোতে লাল শাপলার দেখা মিলবে। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ খালেদুর রহমান সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ডিবিবিলের পর্যটন সম্ভাবনা এবং ইউরেনিয়ামের খনির অস্তিত্বের কথা গোপন রেখে বিলগুলোকে ভরাট করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ষ্টোন ক্রাশার জোন করার পরিকল্পনা, জায়গা চিহ্নিত করণসহ ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রতিবাদে ২২ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ ১২১টি পরিবার এবং পরিবেশবাদী সংগঠনে বেলা সিলেটের কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে মানব বন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
আগত পর্যটকদের দাবি, ডিবির হাওর এলাকার ৪টি বিলকে যদি সরকারি উদ্যোগে বিলগুলোর লীজ বাতিল করে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলা হয় তাহলে বৎসরের প্রায় ৮মাস লাল শাপলা বিলে পাওয়া যাবে। কেউ কেউ বলেন সারা বৎসর পাওয়া যাবে। তাদের দাবি অবিলম্বের বিলগুলোর লীজ প্রথা বাতিল করে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করার।
এবিষয়ে সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি- বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আব্দুল হাই আল হাদি বলেন- ডিবির হাওর এলাকায় একটি লাল শাপলা সৌন্দর্য্য যেমন রয়েছে তেমনী হারিয়ে যাওয়া নানা জীব বৈচিত্র রয়েছে এখানে। তার চেয়েও অতি মূল্যবান খনিজ সম্পদ ‘ইউরেনিয়াম’ মজুদ রয়েছে ডিবি বিলে। তাই পরিবেশের এবং খনিজ সম্পদ ইউরেনিয়ামের দিক বিবেচনা করে ডিবিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পর্যটন অঞ্চল ঘোষণা করা এবং অতি মূল্যবান ইউরেনিয়াম খনিটি রক্ষা করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন- সম্প্রতি লাল শাপলার এবং বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির অভয়ারন্য এই বিলের প্রাকৃতিক দিক বিবেচনা করে বিশেষ করে এই লাল শাপলা বিলগুলো গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের অঞ্চলে আগত পর্যটকদের বিশেষ বিনোদনের ভূমিকার কথা বিবেচনা করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ষ্টোন ক্রাশার জোন করার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। লাল শাপলাকে টিকিয়ে রাখতে এবং পর্যটদের আরও আর্কষনীয় করে তুলতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করার আশা ব্যক্ত করেন।