সিলেট সুরমা ডেস্ক
অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বর্তমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদসহ দুটি বিধান সংবিধানের মূল ভিত্তি ও কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অতি তাড়াতাড়ি তা থেকে সরে যেতে (বাহাত্তরের সংবিধান) সংসদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘বর্তমান সংবিধানের ১১৬ ও ১১৬ (এ) সংবিধানের মূল নীতির সাংঘর্ষিক। এ দুটো বিধান যে সংবিধানের পরিপন্থী। এটি আমাদের এই পবিত্র বই (সংবিধান) থেকে অতি তাড়াতাড়ি সরে ফেলার জন্য এখানে উপস্থিত সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানাব। এটি থাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বেশ ব্যাঘাত হচ্ছে।’ শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারের আইন পেশায় ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ আহ্বান জানান।
বর্তমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা এবং ১১৬ ‘ক’ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীরা বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন বিষয়ে বলা আছে। বর্তমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার-কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে।
আর ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে, বিচার-কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আসছে
নানা সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পরিবর্তন করা হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি অ্যাক্ট) ৫৭ ধারা। এর পরিবর্তে নতুন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) প্রণয়ন করা হচ্ছে। নতুন এ আইনটিতে ৫৭ ধারাকে ঘিরে সেসব সংশয় ও প্রশ্ন রয়েছে তার জবাব পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মানবাধিকার দিবস-২০১৬ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপস্থিত এক আলোচকের ৫৭ ধারা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
৫৭ ধারায় পরিবর্তন এনে নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে তথ্য প্রযুক্তি আইনটি করা হয় মূলত ‘ইলেকট্রনিক সিগনেচার’কে বৈধতা দেওয়ার জন্য। পরে ২০১৩ সালে এতে কিছু সংশোধনী আনা হয় এবং ৫৭ ধারাকে সেই সংশোধনীর (অ্যামেন্ডমেন্ট) মধ্যে যুক্ত করা হয়। তিনি বলেন, তখন থেকে এই ৫৭ ধারা নিয়ে সুশীল সমাজে কিছু প্রশ্ন উঠেছে, বলা হচ্ছে আইনের এই ধারাটি মানুষের বাক স্বাধীনতা খর্ব করাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা তৈরি করছে। আর সে জন্যই ৫৭ ধারাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট হচ্ছে। নতুন এই আইনে যেন এমন প্রশ্ন না থাকে, কোন ‘ভাওলেশন’ যেন না থাকে সেইভাবেই নতুন আইন ও ধারা প্রণয়ন করা হচ্ছে। ৫৭ ধারা নিয়ে সাধারণের মনে যত প্রশ্ন রয়েছে তার সঠিক জবাব নতুন আইনটিতে পাওয়া যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এর আগে অনুষ্ঠানে কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের (এনএইচআরসিবি) চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনএইচআরসিবি এর পূর্ণকালীন সদস্য মো. নজরুল ইসলাম।