সিলেট সুরমা ডেস্ক
সিলেটে কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বহুজাতিক গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান শেভরন। এদিকে বাংলাদেশে ব্যবসা বিক্রির সংবাদে শেভরনের নিয়ন্ত্রাধীন সিলেটের ৩ গ্যাসক্ষেত্রের ৩৭৫ কর্মীর মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। লভ্যাংশের ৫ শতাংশ, গ্র্যাচুয়িটি ও মালিকানা পরিবর্তন সুবিধা- এই ৩ দাবি আদায়ের জন্য সম্প্রতি শেভরন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নও গঠন করেছেন শেভরনের কর্মীরা। উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তির (পিএসসি) আওতায় শেভরন সিলেটের জালালাবাদ, হবিগঞ্জের বিবিয়ানা ও মৌলভীবাজারের মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা করছে। এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে ৩৭৫ জন কর্মী কর্মরত আছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে শেভরনের বাংলাদেশে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই শেভরনের কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। নিজেদের চাকরির ভবিষ্যত নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। নতুন প্রতিষ্ঠান সকল কর্মীদের বহাল রাখবে কি না কিংবা তাদের বেতন কাঠামো কেমন হবে এনিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। ব্যবসা বিক্রির সংবাদ জানার পর শেভরনের কর্মীরা প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করে নিজেদের দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। এরপ্রেক্ষিতে গত অক্টোবরে শেভরনের ফিল্ড ম্যানেজার সাব্বির হোসেন সিলেটের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি এই তিন গ্যাসক্ষেত্রের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তাদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে জানতে চান। তবে ফিল্ড ম্যানেজারের পরিদর্শনের এক মাস পেরিয়ে গেলেও দাবি পুরণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন শেভরনের কর্মকর্তারা। সিলেটের জালালাবাদ ও হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে কর্মরত শেভরনের পাঁচজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতিবছর কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ করে কর্মীদের দেওয়ার কথা। কিন্তু শেভরন এখন পর্যন্ত এই খাতে কোনো অর্থ দেয়নি। এছাড়া গ্যাচুয়িটি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা। জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে কর্মরত একজন কর্মী বলেন, শেভরনের কাছ থেকে যে প্রতিষ্ঠান গ্যাসক্ষেত্রটি কিনে নেবে তারা আমাকে নাও নিতে পারে। অথবা আমিও তাদের সাথেধ কাজ করতে না পারি। এসবক্ষেত্রে কোম্পানি বিক্রির সময় কর্মীদের ‘চেঞ্জ অব কন্ট্রোল বেনিফিট’ পেয়ে থাকেন। কিন্তু শেভরনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। এসব দাবি আদায়ে সম্প্রতি শেভরনের কর্মীরা ‘শেভরন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’ গঠন করেছেন বলে জানান তিনি। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে কর্মরত এক কর্মী বলেন, বিক্রির সংবাদ শোনার পর থেকেই নিজের ভবিষ্যত নিয়ে আতংকে আছি। এমন মানসিক পীড়নের মধ্যে থেকে গ্যাস উত্তোলনের মতো একটি স্পর্শকাতর কাজ করাটাও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে উদ্বেগ থাকলেও গ্যাস উত্তোলনে তা তেমন কোনো প্রভাব ফেলছে না বলে জানিয়েছেন ৩ গ্যাসক্ষেত্রেরই কর্মীরা। তবে কর্মীদের কেউই নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে এ ব্যাপারে শেভরনের মুখপাত্র বলেন, শেভরন বাংলাদেশ সব কর্মসংস্থান চুক্তি, শ্রম আইনসহ প্রযোজ্য সকল আইন মেনে চলে। কোনো কর্মীর সাথেই এসব আইনের ব্যত্বয় ঘটবে না। এদিকে, ব্যবসা বিক্রির প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সিলেটে অন্যান্য কার্যক্রমও গুটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে শেভরন। সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ যাত্রী ছাউনি নির্মান করেছিলো শেভরন। সবগুলো যাত্রী ছাউনির মধ্যে নিজেদের লগো সম্বলিত বোর্ড লাগিয়েছিলো শেভরন। তবে সম্প্রতি এসব যাত্রী ছাউনির শেভরনের লগো তুলে ফেলা হয়েছে। শেভরনের একজন কর্মকর্তা বলেন, গুলশানে জঙ্গি হামলার পর শেভরনের মূল কার্যালয় থেকে বাংলাদেশে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। আমরা ভেবেছিলাম সে নির্দেশনা পেয়েই কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিভিলিটির আওতাধীন বিভিন্ন কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে পরে জেনেছি বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়ার অংশ হিসেবেই এসব করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, শেভরন পরিচালিত তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের স্বত্ব কিনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পেট্রোবাংলা। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পেট্রোবাংলার প্রস্তাব সোমবার অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটের তিন গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে বাপেক্স আবিস্কৃত জালালাবাদে ১৯৯৯ সালে গ্যাস উৎপাদন শুরু করে শেভরন। এছাড়া ১৯৯৮ সালে বিবিয়ানা এবং ১৯৯৯ সালে মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে শেভরন। এর মধ্যে বিবিয়ানায় ২০০৭ সালে এবং মৌলভীবাজারে ২০০৫ সালে উৎপাদন শুরু করে।