নিহত ৫ জনের দাফন সম্পন্ন, ১ জনের লাশ হস্তান্তর: এখনো চিকিৎসাধীন ৪১ জন
উপজেলা জুড়ে পটকা মাছ বিক্রয় নিষিদ্ধ করল প্রশাসন
জৈন্তাপুর সংবাদদাতা
সিলেটের জৈন্তাপুরে ৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পটকা (স্থানীয় নাম ফুটকরা মাছ) খেয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৪৬জন আহত হন। এঘটনায় মঙ্গলবার ৫ জন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১জন মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে ৪১ জন সিলেট শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশংঙ্কা জনক বলে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। নিহত ৫ জনের দাফন সম্পন্ন। উপজেলা জুড়ে শোকের মাতম বইছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে পটকা বাজারে বিক্রয় নিষিদ্ধ করে মাইকিং করা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়- গত ৫ডিসেম্বর সোমবার উপজেলার দরবস্ত বাজার হতে বিভিন্ন গ্রামের লোকজন পটকামাছ ক্রয় করে বাড়ীতে নেন। রাতের খাবারে পটকা মাছ খেয়ে প্রথমে উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের উত্তর মহাইল গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মাওলানা জয়নাল আবেদীন পেটের ব্যাথা অনুভব করেন। ঐরাতেই থাকে জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরদিন ৬ডিসেম্বর সকালে একই পরিবারের সদস্য আব্দুর রহিম, সোলেমান হোসেন, লোকমান হোসেন সহ অন্যান্যরা পটকা মাছ খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাদেরকে জৈন্তাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অজ্ঞাত রোগে অক্রান্ত হলে দ্রুত দুপুরের দিকে সিলেট এম.এ.জি হাসপাতাল সহ অন্যান্য হাসপাতালে তাদেরকে প্রেরণ করা হয়। বিকাল অনুমান প্রায় ৪টার দিকে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান দরবস্ত ইউনিয়নের উত্তর মহাইল গ্রামের আব্দুর রহিম (৬০), তার ছেলে সোলেমান হোসেন (৩০), লোকমান হোসেন (২৮), পার্শ্ববর্তী বাড়ীর সৌদী প্রবাসী আনিছুল হকের মেয়ে ২য় শ্রেণীর ছাত্রী মনি বেগম (১০), প্রথম শ্রেনীর ছাত্র রাহিম আহমদ (৮)। সর্বশেষ ৭ ডিসেম্বর বুধবার সকালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে মারা যান উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের থুবাং গ্রামের সোহা মিয়ার স্ত্রী সিফাতুন নেছা (৬০)।
জৈন্তাপুর উপজেলার চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান- দরবস্ত ইউনিয়নের উত্তর মহাইল, লামা মহাইল, কুড়গ্রাম, গর্দ্দনা, বারগাতি, খলাগ্রাম, চারিকাটা ইউনিয়নের থুবাং, বনপাড়া গ্রামের আরও প্রায় ৪০জন শিশু, মহিলা, পুরুষ ও বৃদ্ধরা রোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেট শহরের ওয়েসিস হাসাপাতাল, রাগিব রাবেয়া হাসপাতাল, মাউন্ট এডোরা হাসপাতাল ও সিলেট এম.এ.জি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক আরও ৯জন আই.সি.ইউতে ভর্তি রয়েছেন।
স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ জৈন্তাপুর পটকা ট্র্যাজিডিতে নিহত ৫ জনের নামাজে জানাজায় কয়েক সহস্রাধীক মুসল্লীরা অংশ গ্রহণ করেন। নামাজে জানাজার উত্তর মহাইল মাঠে চোঁখের অশ্র“তে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। নামাজে জানাজা শেষে আব্দুর রহিম (৬০), সোলেমান হোসেন (৩০), লোকমান হোসেন (২৮) এর দাফন সম্পন্ন করা হয়। তবে রাহিম আহমদ (৮), মনি বেগম (১০) লাশ বাড়ীতে রাখা হয়েছে। তাদের উভয়ের পিতা আনিছুল হক সৌদি আরব হতে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বাড়ী পৌছার পর দ্বিতীয় নামাজে জানজার মাধ্যমে তার শিশুদের লাশ দাফন করা হবে।
এদিকে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারিকাটা ইউনিয়নের থুবাং গ্রামের সোয়া মিয়া’র স্ত্রী সিফাতুন নেছার লাশ পরিবারের কাছে হস্থান্তর করা হয়েছে। রাত ১০টার মধ্যে সিফাতুন নেছার নামাজে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হবে বলে জানান নিহতের ভাই নুরুল্লাহ।
এদিকে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলার সব কয়েকটি বাজারে পটকা, পিরানহা, ফরমালিন যুক্ত এবং পচাঁ মাছ বিক্রয়ের উপর নিষেদাজ্ঞা জারী করে মাইকিং করা হচ্ছে। পটকা ট্র্যাজিডির ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের শোক প্রকাশ করে এবং অন্যান্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের খোঁজ খরব নেওয়া হয়। আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার খরচ বহনের জন্য উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।