শাকির আহমদ, মৌলভীবাজার :
আজ ৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদারমুক্ত হয়েছিল মৌলভীবাজার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর উপর স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীদের সর্বপ্রথম হামলার ঘটনা ঘটেছিল এ মৌলভীবাজারে। এ হামলার ঘটনার মাধ্যমেই দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীদের প্রতিরোধ রুপ নিয়েছিল রণ প্রতিঘাতে। সূচনা হয়েছিল হামলার জবাবে পাল্টা হামলার।
২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার পরদিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ দুপুরে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর একটি টহল দল তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমা (বর্তমানে জেলা) সদর থেকে ১২ মাইল দূরবর্তী কমলগঞ্জ থানাধীন (বর্তমানে উপজেলা ও থানা) শমসেরনগর বাজারে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বৃদ্ধ ম্যাজিশিয়ান সিরাজুল ইসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। এ ঘটনায় চরম বিক্ষুব্ধ স্বাধীনতাকামী স্থানীয় জনতা পরদিন ২৮ মার্চে নিকটস্থ সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (ইপিআর), আনসার ও মুজাহিদ সদস্যদের সমন্বয়ে শমসেরনগরের তিনটি স্থানে এ্যাম্বুশ করে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলসহ ৯ জন পাক সেনাকে বহনকারী একটি সামরিক জীপ গাড়ীতে প্রচন্ড হামলা চালিয়েছিলেন। এ হামলায় দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলসহ ৯ জন পাক সেনার সবাই নিহত হয়েছিল। মৌলভীবাজারে ২৮ মার্চের ওই হামলা-ই বাংলাদেশে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর উপর স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীদের সর্বপ্রথম হামলা।
তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের বাসভবন (বর্তমানে জেলা প্রশাসকের বাসভবন) ছিল দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর ব্রিগেড সদর দফতর। মৌলভীবাজারকে দখলদার পাক হানাদারমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪ টার দিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত একটি দল মৌলভীবাজার শহর থেকে ৪ মাইল দূরবর্তী কালেঙ্গা নামক স্থানে অবস্থান নেয় এবং মধ্যরাতে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বিরামহীন এ ভয়াবহ যুদ্ধে নিহত হয় মিত্রবাহিনীর ১শ ২৭ জন সেনা। চলমান এ যুদ্ধের একপর্যায়ে পরদিন ৫ ডিসেম্বর থেকে দখলদার পাক হানাদার বাহিনীর ঘাটিসমূহে শুরু হয় মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা। ফলে, বিপর্যস্থ-বিধ্বস্থ দখলদার পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটে সিলেটের দিকে পালাতে শুরু করে। পালিয়ে গিয়ে প্রথমে তারা মৌলভীবাজার শহর থেকে ১৮ মাইল দূরবর্তী মৌলভীবাজার-সিলেট সীমান্তবর্তী শেরপুর নদীবন্দরে অবস্থান নেয় এবং ৭ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে সিলেটে পালিয়ে যায়।
এভাবেই ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর দখলদার পাক হানাদারমুক্ত হয় মৌলভীবাজার। মৌলভীবাজারকে দখলদার পাক হানাদারমুক্ত করার যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আজিজ আহমদ বেগ এবং মিত্র বাহিনীর মেজর দায়ান। মৌলভীবাজার দখলদার পাক হানাদারমুক্ত করার পর দেওড়াছড়া চা বাগান হয়ে মৌলভীবাজার শহরে এসে তারা খৃষ্টান মিশনের একটি ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন।