নবীগঞ্জ সংবাদদাতা
নবীগঞ্জের আলেচিত নিখোঁজের ৪দিন পর কিশোর অনুপ দাশের হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতাকৃত ৫ আসামীদের মধ্যে মামলার প্রধান আসামী গোপাল দাশের ২ দিনের রিমান্ড মুঞ্জর করেছে বিজ্ঞ আদালত। গতকাল আসামীদের হবিগঞ্জ চীফ জুডিশিয়্যাল ম্যাজেষ্ট্রিট নিসাত সুলতানার কোর্টে হাজির করার হলে বাদী পক্ষের আইনজীবী বারের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জমশেদ মিয়া, সুলতান মাহমুদসহ ১০/১৫জন আইনজীবী কিশোর অনুপের নৃশংস হত্যাকান্ডের মোটিভ উদঘাটনের জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট গোপাল দাশের ২ দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর ও বাকী ৩ জনকে জেল গেইটে ৪দিন জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ প্রদান করেন। জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের মৃত অন্তু দাশের পুত্র অনুপ দাশ (১৩) গত ৩০ নভেম্বর রাতে হলিমপুর বাজারস্থ নিজ দোকান থেকে বাড়ি যাবার পথে নিখোঁজ হয়। বাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে হলিমপুর গ্রামের ভুষন দাশের দোকানের উত্তর-পুর্ব পাশের খালে কিশোর অনুপ দাশের ব্যবহৃত চাদর ও জুতা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ১ ডিসেম্বর নিখোঁজ অনুপের মা উষা রানী দাশ নবীগঞ্জ থানায় জিডি দায়ের করেন। উক্ত জিডির সুত্র ধরে অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল বাতেন খানের তত্ত্বাবধানে এসআই মোবারক হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তদন্ত শুরু করেন। এক পর্যায়ে গত শনিবার বিকেলে হলিমপুর গ্রামের সুখময় দাশের পুত্র গোপাল দাশ (৫০), হরমোহন দাশের পুত্র অধীর দাশ (৫৫), প্রল্লাদ দাশের পুত্র পিন্টু দাশ (৪২), ধীরেন্দ্র দাশের পুত্র প্রন্তা কে সন্দেহজনকভাবে পুলিশ আটক করে। এ ব্যাপারে গত শনিবার নবীগঞ্জ থানায় ৩৬৪/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন অনুপ দাশের মা উষা রানী দাশ। গত রবিবার ধৃতদের কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়। ওই দিন বিকেলে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে হলিমপুর গ্রামের ধনাই দাশের পুত্র দিপংকর দাশকে পুলিশ আটক করে। আটকৃত দিপংকর দাশকে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল বাতেন খান জিজ্ঞাসাবাদ করলে দীপংকর ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ একই গ্রামের জ্যোতিময় দাশের বাড়ির স্যানেটারী রিং লেট্রিনের ভিতর থেকে অনুপ দাশের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার খবর পেয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন। আটক দিপংকর দাশ থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে ইতিপুর্বে গ্রেফতারকৃত গোপাল দাশ, দিপংকর দাশসহ ৩ জন মিলে গত ৩০ নভেম্বর রাতে কিশোর অনুপ দাশকে বাড়ি ফেরার পথে আটক করে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করেছে বলে জবানবন্দি দেয়। এক পর্যায়ে তারা পাশের বাড়ির জ্যোতিময় দাশের বাড়ির স্যানেটারী রিং লেট্রিনের স্লেব তুলে ভিতরে ফেলে দিয়ে পুনরায় স্লেব দিয়ে ঢেকে ফেলে। এ সময় দিপংকর দাশের ডান হাতের আঙ্গুল কেটে যায়। ঘটনার পর থেকেই দিপংকর দাশের চলাফেরা ও কথাবার্তা সন্দেহ জনক ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। অনুপ দাশের পিতা অন্তু দাশ বিগত ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসে নি। ঘটনার দু’দিন পর বাড়ির পশ্চিমে নদীর পাড়ে অন্তু দাশের লাশ পাওয়া যায়। প্রায় দেড় বছরের মাথায় একই ভাবে নিখোঁজের ৪ দিন পর কিশোর পুত্র অনুপ দাশ’র মৃতদেহ উদ্ধার হলো। সুত্রে জানা গেছে, আর্থিক লেনদেন এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। ধৃত প্রন্তা দাশ ও মাদাই দাশ ও পিন্টু দাশ টাকা পাওনা দাবী করে মৃত অনুপ দাশের সাড়ে ৫ কেদার জমি জোর পূর্বক দখল নেয়। এছাড়া ধৃত গোপাল দাশ দাবী করে অনুপের পিতা মৃত অন্তু দাশের নিকট দেড় লাখ টাকা পায়।উষা দাশ তার মামলায় উল্লেখ করেন পিন্টু দাশ, প্রন্তা দাশ তাদের সাথে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন নিয়ে প্রায়দিন টাকা না দিলে আমাকে ও আমার সন্তানদের আমার স্বামীর মত গুম করে হত্যা করার হুমকি দিত। নৃশংস হত্যাকান্ড নিহত অনুপ দাশের মা উষা রানী দাশ তাদের পরিবারের লোকজনের মধ্যে এখনও চলছে কান্নার রুল।