রফিকুল ইসলাম কামাল
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে। এসব রেলক্রসিংগুলো ক্রমেই হয়ে ওঠেছে মৃত্যুফাঁদ। অবৈধ এসব রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় গত প্রায় পাঁচ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬৭ জন মানুষ।
সিলেট রেলওয়ে থানা সূত্র জানায়, সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বৈধ রেলক্রসিং রয়েছে ৫টি। এছাড়া সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলাস্থ ভাটেরা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বৈধ ক্রসিং রয়েছে ৯টি। বৈধ এই ১৪টি রেলক্রসিংয়ের মাত্র ৬টিতে গেইটম্যান রয়েছেন। বাকি ক্রসিংগুলো সবসময়ই থাকে উন্মুক্ত।
থানা সূত্র জানায়, ছাতক রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভাটেরা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত অবৈধ রেলক্রসিং রয়েছে অর্ধশতাধিক। দীর্ঘ এ রেল পথের উপর দিয়ে যততত্র নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক ও হাঁটাপথ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় লোকজন এসব সড়ক ও হাঁটাপথ তৈরী করেছেন। যে কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
রেলওয়ে থানা সূত্র জানায়, ছাতক থেকে ভাটেরা পর্যন্ত রেল পথে গত প্রায় পাঁচ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। ২০১২ সালে ২২ জন, ২০১৩ সালে ১০ জন, ২০১৪ সালে ১৩ জন, ২০১৫ সালে ৯ জন এবং চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
সিলেট রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রেল পথে অবৈধ ক্রসিং, ঝুঁকি নিয়ে রেল পথে পারাপার এবং কানে হেডফোনে লাগিয়ে রেল পথে হাঁটার কারণে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ।’
ওসি বলেন, ‘অবৈধভাবে তৈরি উন্মুক্ত রেলক্রসিং বন্ধ, বৈধ ক্রসিংগুলোতে গেইট নির্মাণ ও গেইটম্যান নিয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমানো যাবে না।’
সিলেট রেলওয়ে থানা সূত্র জানায়, রেল পথে ক্রসিং তৈরী করতে হলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। ক্রসিংয়ের উভয়পাশে গেইট নির্মাণ, গেইটে কমপক্ষে তিনজন প্রহরীর নিয়োগ ও মজুরি প্রদান এবং সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার খরচও সংশ্লিষ্টদের বহন করতে হয়। এ বিষয়গুলো ব্যয়বহুল হওয়ার কারণেই স্থানীয় পর্যায়ে অবৈধভাবে রেলক্রসিং তৈরী করা হয়। এছাড়া রেল পথের পাশেই বাজারহাট গড়ে ওঠায় রেললাইনের ওপর দিয়ে অবৈধ সড়ক ও হাঁটাপথ তৈরী করা হয়।
এদিকে রেললাইনের ওপর দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে রেলওয়ে পুলিশ। এর অংশ হিসেবে সিলেট বিভাগের সবকয়টি রেলওয়ে স্টেশন ও রেললাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে প্রচারপত্র বিলি ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।