সিলেট সুরমা ডেস্ক :::: প্রশাসনে তিন স্তরে (উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব) অন্তত ৫৭১ কর্মকর্তার পদোন্নতির সুপারিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেছেন। রবিবার সকালেই পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে সংখ্যার দিকটায় কিছুটা হের ফের হতে পারে। পদোন্নতির এ ধাক্কায় প্রশাসনিক সাংগঠনিক কাঠোমোয় প্রকৃতপক্ষে ধস নামলো। এমনিতেই অনেক আগেই পদের অধিক পদোন্নতি দিতে গিয়ে প্রশাসনের মধ্যমভাগ মোটা করে ফেলা হয়েছে। এখন আর শেঁকড় বা আগা বলতে অবশিষ্ট কিছুই থাকলো-এমনটা বলা অসঙ্গত নয় বলে মন্তব্য পর্যবেক্ষক মহলের। অবশ্য দীর্ঘদিন পদোন্নতি প্রক্রিয়ার জট খুলতে দফায় দফায় পদোন্নতি দিতে হয়েছে। সর্বশেষ পদোন্নতির ফলে এখন অতিরিক্ত সচিবের মঞ্জুরীকৃত ১০৭ পদের বিপরীতে কর্মকর্তার সংখ্যা ৫২২ জন, যুগ্ম সচিব পদ আছে ৪৩০, কর্মকর্তার এখন তা বেড়ে হল ১ হাজার ১৫২ জন এবং উপসচিবের ৮৩০ পদের বিপরীতে কর্মকর্তা হলেন ২ হাজার ১২৭ জন। জানা গেছে, সর্বশেষ অতিরিক্ত সচিব পদে ৮৬ ব্যাচসহ মোট ১৪৯ জন, ১১তম ব্যাচসহ যুগ্ম সচিব পদে ১৯৩ জন এবং উপসচিব পদে একুশতম ব্যাচসহ ২২৯ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করে এসএসবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার রাতে অতিদ্রুত তৈরি করা এ সংক্রান্ত সার—সংক্ষেপ অনুমোদন করেন। এর আগে সর্বশেষ পদোন্নতি হয়েছিল এ বছরের ১৫ মে। তখন অতিরিক্ত সচিব পদে ৮৭ জন, যুগ্ম সচিব পদে ৬৯ জন এবং উপসচিব পদে ৬৪ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে দীর্ঘতম সময় ধরে চলা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা শেষ হয় গত বৃহস্পতিবার। সভা শেষ হওয়ার পর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশে প্রথমবারের মতো পদোন্নতির জন্য সুপারিশকৃত নাম অনুমোদন এবং তা প্রকাশ হচ্ছে আজ।
শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতি শাখায় কাজ হয়েছে।
পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এবারের পদোন্নতিতে যোগ্য অনেকইে এসএসবির দুই/একজন সদস্যের ব্যক্তিআক্রোশের শিকার হয়ে বঞ্চিত হতে হয়েছে। আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি গোষ্ঠীর অনেকেই পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন। কীভাবে তা সম্ভব হয়েছে সে নিয়ে নানা প্রশ্ন কর্মকর্তাদের মধ্যে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ সংখ্যার তুলনায় অস্বাভাবিক সংখ্যায় কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়ায় প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠমোয় বড় চাপ তৈরি হবে। তারা বলছেন, পদোন্নতি প্রাপ্তদের সামজিক মর্যদা বাড়বে, কিছু আর্থিক সুবিধাও বাড়বে বটে কিন্তু তাদের প্রায় সকলকেই অধঃস্তন পদে থেকেই কাজ করতে হবে। কারণ এর আগের দফায় দেওয়া পদোন্নতিপ্রাপ্তরাই এখনো বসার জায়গা পাননি। বেশিরভাগই এখনও পদোন্নতিপূর্ব পদেই কাজ করছেন। অর্থাৎ যিনি অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন তিনি কাজ করছেন যুগ্ম সচিবের, যুগ্ম সচিব কাজ করছেন উপসচিবের আর উপসচিব কাজ করছেন জ্যেষ্ট সহকারি সচিব তথা ডেস্ক অফিসারের পদে।
উল্লেখ করা যেতে পারে প্রশাসনে পদ ভেদে দুই, তিন, চার বছর চাকরি অভিজ্ঞতা ও সমগ্র চাকরিজীবনের কর্মদক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে পদোন্নতি বিবেচনা করার কথা। কিন্তু ৯০-এর দশকে নির্বাচিত সরকার আসার পর থেকে দেখা যায়, আরও তথ্যের প্রয়োজন এরকম মন্তব্য লিখে অথবা জনতার মঞ্চের কর্মকর্তা এই মন্তব্য লিখে অসংখ্য কর্মকর্তার পদোন্নতি আটকে রাখার রীতি চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সরকারগুলো এ অর্থাৎ আওয়ামী লীগ, বি অর্থাৎ বিএনপি, বিজে অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত আর জে অর্থাৎ ঘোর জামায়াত এভাবে কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে পদোন্নতি থেকে শুরু করে নিয়োগ/পদায়ন আটকে রাখার ধারা চালু করে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও অসংখ্য কর্মকর্তাকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। আবার অনেকে ফায়দাও লুটেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ না থাকায় পদোন্নতি দেওয়াটা অনেকদিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ আইনবর্হিভূত কাজ। কারণ রাষ্ট্রীয় বেতন-ভাতা দেওয়া হয় পদের বিপরীতে। এখন একজন কর্মকর্তা পদ না পেয়েও বেতন-ভাতা নেবেন এটি বিধিবিধান বর্হিভূত। তবে আইন অনুযায়ী মূল পদে চাকরির মোট সময় অতিক্রান্ত হলেই একজন কর্মকর্তার (অন্যান্য যোগ্যতা সাপেক্ষে) পদোন্নতি দেওয়াই উচিত। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখার ফলে এখন পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ফলে এখন পদোন্নতি দেওয়াটাই জরুরি ছিল। তবে সময়ের প্রয়োজনে এখন জরুরি ভাবে প্রশাসনিক কাঠামোয় সংস্কার আনা দরকার। মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থায় কোথায় কী ধরনের পদে কত জনবল প্রয়োজন সেটি ঠিক করা দরকার। তা না হলে পদোন্নতির যোগ্য সব কর্মকর্তার সময়মতো পদোন্নতি যেমন দেওয়া সম্ভব হয় না- তেমনি পদোন্নতির পর পোস্টিং দেওয়াও সম্ভব হয় না।