স্টাফ রিপোর্টার
দূঘর্টনার কবল থেকে রক্ষা করলেন এক কলেজ ছাত্রীকে সিলেটের জেলা প্রশাসক। গত বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরার পথে অটোরিকশার নিচে চাপা পড়ে কাতরাচ্ছিলেন ওই কলেজছাত্রীটি। সাহায্যের জন্য আর্তি জানাচ্ছিলো। আশপাশে তেমন লোকজন না থাকলেও দুর্ঘটনাস্থল পার হয়ে একের পর এক যানবাহন ছুটে চলছে। তবে কেউ গাড়ি থামিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধারে করতে এগিয়ে আসেনি। কিন্ত পাশ দিয়ে আর সবার মতো চলে যেতে পারেননি সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন।
নির্ধারিত কর্মসূচিতে না গিয়ে আগে মেয়েটিকে উদ্ধার করে কাছের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন তিনি। উদ্ধার হওয়ার সময় মেয়েটি জানত না জেলা প্রশাসক নিজে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে জীবন বাঁচিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই জেলা প্রশাসকের এমন মানবিক কাজের জন্য তার প্রশংসা করছেন।
দুর্ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ সুরমার হাজীগঞ্জ এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা করে বাড়ি ফিরছিলেন কলেজছাত্রী প্রিয়াংকা দাস। তিনি সিলেট এম সি কলেজের বিএসসি দ্বিতীয় বর্ষর ছাত্রী। প্রিয়াংকা বালাগঞ্জ উপজেলার কায়স্থঘাট চক গ্রামের গোবিন্দ দাসের মেয়ে।
জানা গেছে, চলন্ত অবস্থায় হঠাৎ গাড়িটির সামনের চাকা খুলে গেলে দুর্ঘটনায় পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাটি। এ সময় গাড়ির নিচে চাপা পড়ে বাঁচার আশায় চিৎকার করতে থাকেন প্রিয়াংকা। ঘটনাস্থলে কোনো লোকজন ছিল না। তবে সড়ক দিয়ে অনেক যানবাহন চলাচল করছিল। কিন্ত কেউ থামেনি। ঠিক সে সময় সড়ক দিয়ে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় যাচ্ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন। উল্টে যাওয়া গাড়ি দেখে সেখানে থামেন তিনি। তারপর শুনতে পান কারো সাহায্যের আর্তি। তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না। গাড়ি থেকে নেমে দুর্ঘটনাস্থলে যান। আহত কলেজ ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে নিজ গাড়িতে করে চিকিৎসার জন্য ফেঞ্চুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তিনি। পরে জেলা প্রশাসক নিজেই মেয়েটির বাবার কাছে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে মেয়েটির অভিভাবকরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান।
আহত প্রিয়াংকা দাস বলেন, গাড়ির চাপায় প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল। হঠাৎ দেখি কয়েকজন মিলে আমাকে গাড়ির নিচ থেকে উদ্ধার করছেন। আমার নাম, ঠিকানা জিজ্ঞেস করার পর আমাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে জানতে পারি উনি সিলেটের ডিসি স্যার।
শুক্রবার এ নিয়ে জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, মেয়েটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পেরেছি, সেটা আমার ভালো লাগছে। আমি মনে করেছি এটা আমার দায়িত্ব। তার বাবাকে টেলিফোন করে হাসপাতালে আসতে বলে তারপর আমি একটু স্বস্তি পেলাম। সবাইকে বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবারই বাড়িতে যাওয়ার পর মেয়েটি ও তার বাবা টেলিফোন করে কথা বলেছে আমার সঙ্গে। এখন সে ভালো আছে।
আহত প্রিয়াংকার বাবা গোবিন্দ দাস জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, মানুষের বিপদে কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন আমাদের সিলেটের জেলা প্রশাসক। মানুষের মধ্যে মানবতা জাগ্রত থাকলে এত হানাহানি থাকত না।