রফিকুল ইসলাম কামাল
দেশের সংবিধান ও দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ দেশের সম্পদ। মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই পেশাগতভাবে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ ও মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে।’ তিনি বলেছেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কর্তব্যপরায়ণ এবং শৃঙ্খলা বজায় রেখে সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার দুপুরে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন সদর দফতরে ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ নয়টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধ সরঞ্জাম দেয়া হচ্ছে। বরিশাল ও পটুয়াখালি জেলার মধ্যবর্তী পায়রা নদী সংলগ্ন লেবুখালী সেনানিবাসে একটি পদাতিক ডিভিশন গঠনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কক্সবাজারে রামুতে আরেকটি পদাতিক ডিভিশন গড়ে তোলা হয়েছে। সারা বাংলাদেশে এভাবে পদাতিক ডিভিশন গড়ে তুলে স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থৈনেতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘শুধু দেশের অভ্যন্তরে না, বাংলাদেশের বাইরেও শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেখানে কর্মরত সৈনিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিপাগল আপামর জনসাধারণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অকুতোভয়, তেজদ্বীপ্ত ও দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল।’
গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে নজিরবিহীন নিরাপত্তায় প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে শাহজালাল (র.) এর মাজারে পৌঁছার পর নামাজ ও ফাতেহা পাঠ শেষে বেলা ১২টার দিকে হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মাজার জিয়ারত শেষে বেলা পৌনে ১টার দিকে জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়ুদল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, ৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সিলেট এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘১৭ পদাতিক ডিভিশনের ১১ পদাতিক ব্রিগেডসহ নয়টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। আজ (গতকাল বুধবার) সেনাবাহিনীর জন্য আনন্দের দিন, পরিপূর্ণতা অর্জনের দিন। আমি বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এ ডিভিশনকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলবেন।’
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ়করণ এবং সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অংশ হিসাবে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও বেশ কিছু ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, সরঞ্জামাদি ও জনবলের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফোর্সেস গোলের আওতায় ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরের অত্যাধুনিক ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর কামান, আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হিসাবে মিসাইল সিস্টেম, পদাতিক বাহিনীর ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল এবং আর্মি এভিয়েশনের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীতে যোগ করেছে নতুনমাত্রা।’
সৈনিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সৎ, কষ্টসাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের ব্যাপারে আমরা অবগত রয়েছি। এজন্য আপনাদের বিভিন্ন কল্যাণের বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। সেনাবাহিনীর সকল সদস্যদের বেতন ও রেশন বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিভিন্ন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর বাইরে সারা দেশে প্রাক প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের পড়াশোনার দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করেছে। উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যাতে আপনাদের সন্তানরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।’
সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান পেয়েছে।’
জালালাবাদ সেনানিবাসের অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টায় বিমানযোগে ঢাকার পথে রওয়ানা হন।