স্টাফ রিপোর্টার
ভারতের শিলং-ভিত্তিক তীর নামের জুয়ায় সর্বশ্বান্ত হচ্ছেন সিলেটের অনেকেই। জেলার গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, দক্ষিণ সুরমা এবং সিলেট সদর ও মহানগরের অনেক জায়গায় তীর শিলং জুয়া খেলার আস্তানা রয়েছে। এর বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন পাবলিক ও ক্লোজড গ্রুপে বসছে। জুয়া খেলা পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও। ফেসবুক গ্রুপে অনেকেই আগাম নম্বর প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধাও গ্রহণও করছেন। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের কার্যক্রম অনুসন্ধান করে দেখা যায়, অনেকেই নিশ্চিত নম্বর দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অগ্রিম টাকা নিচ্ছেন। এতে করে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই।তাই তীর শিলং এর ওয়েবসাইট বন্ধের জন্য বিটিআরসি’র নিকট আবেদন করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ।
জানা যায়, ভারতের শিলংয়ে এ তীর খেলার লটারি সম্পন্ন হয়। প্রতিদিন দুইবার বাংলাদেশ সময় সোয়া ৪টা ও সোয়া ৫টায় দুইবার এর ড্র সম্পন্ন হয়। প্রথম ড্র-তে একজন জুয়াড়ি তার খেলার ৭০গুণ বেশি টাকা পান। আর দ্বিতীয় ড্র-তে সে টাকার পরিমাণ থাকে ৫০ গুণ। মাত্র ১০টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ যে কোনো পরিমাণ টাকা জুয়ার বোর্ডে ধরা যায়। প্রতিদিনকার বিজয়ী জুয়াড়ি ওই দিন রাতেই সে টাকাগুলো পেয়ে যান আর সেই লেনদেন হয় গোপনে নগদে বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। ভারতের শিলংয়ে খেলার কেন্দ্রস্থল হলেও বাংলাদেশে রয়েছেন এর একজন কে›ন্দ্রীয় প্রতিনিধি এবং সেই প্রতিনিধির অধীনে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন এর এজেন্ট। ওই এজেন্টরা সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় জুয়ার বোর্ড বসিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন। টাকা নেওয়ার সময়ে সংশি¬ষ্ট এজেন্টগণ মোবাইলে খুদেবার্তার মাধ্যমে জুয়ার বোর্ডে ধরা টাকার পরিমাণ ও টার্গেট নম্বর দিয়ে থাকেন। জুয়ার আস্তানায় উপস্থিতদের জন্য রেজিস্টার ও টোকেন ব্যবহার করা হয়। এরপর শিলংয়ে জুয়ার ফলাফল হওয়ার পর অনলাইনে সে ফল দেখে বিজয়ীকে টাকা পরিশোধ করা হয়। একটি সূত্র জানায়, সিলেটের শাহগলী বাজার এলাকায় তীর শিলংয়ের বাংলাদেশ এজেন্টের বাড়ি। বড় বড় পেমেন্টের অধিকাংশই সেখান থেকে সম্পাদিত হয়।
তীর শিলং জুয়াখেলার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশি অভিযানে কয়েকটি জুয়ার আস্তানা উচ্ছেদ ও জুয়াড়িদের গ্রেপ্তার করলেও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের যোগসাজশেই এমন খেলা চলার অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক উৎকোচের বিনিময়ে অনেক জায়গায় তীর শিলং খেলতে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, ‘আমরা তাদের ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদী, যতো দ্রুত সম্ভব এর মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রহমত উল¬াহ বলেন, ‘যেসব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এই জুয়া খেলা হচ্ছে, সেই সব ওয়েবসাইট গুলো বন্ধের জন্য আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে বিটিআরসি কাছে আবেদন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত সেই আবেদনের কোনো জবাব আসেনি।’