• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বাইক্কা বিলে অতিথি পাখির আগমন

sylhetsurma.com
প্রকাশিত নভেম্বর ১০, ২০১৬

শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা
দেশের অন্যতম মৎস্য অভয়ারণ্য মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিলের সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। বিশেষ করে শীতকালের (শুষ্ক মওসুমের) বাইক্কা বিলের সাথে পরিচিতিটা একটু বেশি। কেননা শীতে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে এই বিলের চারপাশ। ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বিলের সুনাম সর্বত্র। কিন্তু পানিপূর্ণ বাইক্কা বিলের সাথে আমরা ক’জনই বা পরিচিত। থৈ থৈ করা পানির বাইক্কা বিলের সৌন্দর্যের সাথে অনেকেই পরিচিত নয়। প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তনের এই সংরক্ষিত জলাশয়টি মৎস্য সম্পদে বেশ পরিপূর্ণ। এখানে নানা জাতের মাছের সাথে রয়েছে সাপ-ব্যাঙ আর জলজ উদ্ভিদ। তবে পানিপূর্ণ বাইক্কা বিলে যাওয়া খুব কষ্টের। রাস্তার দুর্ভোগ মনে রাখার মতো! সোজাসাপ্টা কথা বাইক্কা বিলের শ্রাবণধারার টলমল সৌন্দর্য দেখতে হলে ভ্রমণ গ্লানি হিসেবে দেখতে হবে। বাইক্কা বিলের পানি ঘেরা রূপ উপভোগ করতে কিছুটা পথ পায়ে হেঁটেই যেতে হবে।
মাটির রাস্তা তাই কিছুটা বিড়ম্বনা পেয়েই যেতে হবে বাইক্কা বিলে। এই সময়ে বাইক্কা বিলে যাবার সড়কে কিছুটা কাঁদামাটি থাকায় চলে না কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট গাড়ি অথবা অন্য কোনো যানবাহন। এ ক্ষেত্রে নিজের ‘পা’-ই একমাত্র ভরসা।
বাইক্কা বিলে পৌঁছে দেখবেন মাঠ-ঘাট-প্রান্তরের মতো বিলেও শুধুই পানি। নির্দিষ্ট সীমারেখা থেকে বর্ধিত হয় পানির উপস্থিতি। মাছগুলো ছুটোছুটি করতে করতে পানির উপর হঠাৎ মুখ উচিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করে। জলজ পাখিগুলো গলা ছাড়ে ডাক ছাড়ে, সঙ্গীর উদ্দেশ্যে।
ঝিমিয়ে পড়া হিজল-করচ গাছের পাতাগুলো সতেজ হয়ে উঠেছে। ঢোলকলমি চোখ তুলে তাকায় আগত অতিথির দিকে। কাছে-দূরে ব্যাঙের অবিরাম ডাক। বিলের জলে পানকৌড়ি, ছোট সরালি আর পাতিহাঁসের ডুব দেয়ার দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবেই। পানিপূর্ণ বাইক্কা বিলের চারিদিকে শুধুই পানি আর পানি। পানির ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ আর হিজল-করচের ডুবে যাওয়া বনটি যেনো নতুন প্রাণ জেগেছে বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে।
হাইল হাওরে অবস্থিত সংরক্ষিত মৎস্য অভয়াশ্রম ‘বাইক্কা বিল’। ইউএসআইডি’র অর্থায়নে মাচ প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় মৎস্য ও পাখির অভয়াশ্রম। ২০০৩ সালের ১ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় বাইক্কা বিলকে স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এই বিল শুধু মাছের জন্যই নয়, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণির জন্য একটি চমৎকার নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। সৌন্দর্য্যম-িত এ বিল এখন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। নয়নাভিরাম এই জলাভূমিতে রয়েছে হাজারও শাপলা, পদ্মসহ নানান জলজ উদ্ভিদ।
বাইক্কা বিল ছাড়াও শ্রীমঙ্গলে দেখা পাবেন সবুজের নিসর্গে ভরা ৪৪টি চা বাগান, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী খাসিয়া, ত্রিপুরা, সাঁওতালদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র, রামনগরের প্রসিদ্ধ মনিপুরী তাঁতশিল্প ও কাপড়, বৃটিশ চা ব্যবস্থাপকদের কবরস্থান ডিনস্টন সিমেট্রি, ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়া বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, ৫০০ বছরের পুরনো নির্মাই শিববাড়ি, লেবু, পান ও আনারস বাগানের প্রাকৃতিক রূপ প্রভৃতি।
শ্রীমঙ্গলের সাথে সারা দেশের রেল ও সড়কপথে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা থেকে ৩টি, চট্টগ্রাম থেকে ২টি আন্ত:নগর ট্রেন প্রতিদিন যায় শ্রীমঙ্গল। ট্রেনে ভ্রমণ করেই শ্রীমঙ্গল যেতে পারেন। ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ বা শ্যামলী পরিবহনের বাসে করেও যেতে পারবেন। এছাড়া মহাখালী থেকে এনা পরিবহন উত্তরা হয়ে শ্রীমঙ্গল যায়। শ্রীমঙ্গল শহরে পৌঁছে অটোরিক্সা, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, জীপ, প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রো ভাড়া করে আপনি দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে পারবেন।
পর্যটকদের রাত যাপনের জন্য এখানে বেশ কয়েকটি হোটেল, রিসোর্ট, রেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। নির্জন পরিবেশে পাহাড়ি টিলার ওপর নির্মিত টি-রিসোর্ট ও পাঁচ তারকা মানের গ্র্যান্ড সুলতান টি অ্যান্ড গলফ রিসোর্ট এর নজরকাড়া সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে টানবে অনায়াসেই। এছাড়া বিভিন্ন পাহাড়ি টিলার ওপর নির্মিত কটেজগুলোতে রাত যাপন করে পর্যটকরা প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে অবলোকনের সুযোগ পাবেন।
খাবারের জন্যে এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও একটু ভালো মানের খাবারের জন্য আপনাকে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতে যেতে হবে। সেখানে বাঙালি খাবারের সঙ্গে চাইনিজ খাবারও পাবেন। এছাড়া দামি খাবারের জন্যও শহরে অনেক রেস্টুরেন্ট চোখে পড়বে।