শরীফুল ইসলাম চৌধুরী / শাফী চৌধুরী
শূন্য খাঁচা, প্রাণী নেই এই অবস্থা সিলেট চিড়িয়াখানায়। দুই বছর আগে প্রাণী কেনা হলেও এখনো সিলেট বনবিভাগের অর্থে প্রাণীগুলো পোষা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে। এর জন্যে ব্যয়ভার ও ভাড়া মেটাতে হচ্ছে খোদ বনবিভাগকেই। বিভিন্ন অজুহাতে সিলেটে আনা হচ্ছেনা এ প্রাণীগুলো। স্টাফ নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে এই অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে বিলম্ব করা হচ্ছে সিলেট চিড়িয়াখানা উদ্বোধন।
২০১৬ সালের জুন মাসে চিড়িয়াখনা নির্মাণ কাজ সম্পন্নের মেয়াদ থাকলে চার মাস পেরিয়ে গেলেও কবে উদ্বোধন হবে তার উত্তর জানা নেই কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে গত অর্থ বছরে কেনা হয়েছে বাঘ, জেব্রা, ময়ূর, ভাল্লুক ও বিভিন্ন জাতের পাখিসহ ১৮টি প্রাণী। এই প্রাণীগুলো গাজীপুরস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে রাখা হয়েছে। খাবারদাবারসহ প্রাণীগুলোর পেছনে সব ব্যয়ভার বহন করছে সিলেট। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরএসএম মুনিরুল ইসলাম। এই অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজই যেখানে শেষ হয়নি, তার আগেই কেন কোটি টাকার প্রাণী কেনা হয়েছে। আর রোজ এদের পেছনে সিলেটের জন্যে বরাদ্দ অর্থব্যয় হচ্ছে।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, সিলেটের পর্যটন শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নগরীর টিলাগড় ইকোপার্কে ১১২ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে দেশের তৃতীয় চিড়িয়াখানা। ২০১৬ অর্থবছরের জুন মাসে শেষ হতে যাচ্ছে চিড়িয়াখানা নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে চিড়িয়াখানার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ওই সূত্র মতে, ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় সিলেটে তৃতীয় সরকারী বৃহত্তম চিড়িয়াখানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এরজন্যে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চিড়িয়াখানা নির্মাণের জন্য বেছে নেওয়া হয় নগরীর টিলাগড়ের ইকোপার্ক। অধিগ্রহণ করা হয় ১১২ একর জমি। ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর ইকোপার্ক এলাকার প্রস্তাবিত স্থানও পরিদর্শন করেন তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল হাই। কিন্তু কার অধীনে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে, এনিয়ে গোল বাঁধে। এতে আটকে যায় নির্মাণ কাজ।
ওই সূত্র জানায়, চিড়িয়াখানাটি প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হওয়ার কথা থাকলেও বন বিভাগের আপত্তি থাকায় দীর্ঘদিন নির্মাণর কাজ আটকে থাকে। পরবর্তীতে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সভা থেকে বনবিভাগকে চিড়িয়াখানা নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বন বিভাগের অধীনে চিড়িয়াখানা নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের মে মাসে।
সরেজমিনে টিলাগড় ইকোপার্ক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছপালা ও টিলাগুলো অক্ষত রেখেই বিভিন্ন প্রাণীর শেড নিমার্ণ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য ৫টি আরসিসি বেঞ্চ, বিভিন্ন প্রাণীর শেডে যাওয়ার রাস্তা, ৪ টি সেন্ট্রি পোস্ট, ৫টি বক্র কালভার্ট, পানি সরবহরাহের শ্যালো টিউবওয়েল, স্টাফ ব্যারাক, সাইড ড্রেন, টিকেট কাউন্টার, পুকুর পুনঃখনন, ফিড এন্ড ফুড প্রিজারভেশন, অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ সংযোগ, দর্শনার্থীদের জন্য গেস্ট হাউস, আহত ও উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর জন্যে পুনর্বাসনকেন্দ্র ও হাসপাতাল। কিন্তু প্রাণীশূন্য এ খাঁচাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অযতœ আর অবহেলায় পড়ে থাকায় মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে।
টিলাগড় ইকো পার্কের বিট কর্মকর্তা চয়ন ব্রত চৌধুরী জানান, প্রথম দফা ট্রেন্ডারের কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মুনির এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছে বন বিভাগ। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাঘ, হাতি, বানর, জেব্রা, ভাল্লুক, খরগোশ, হরিণ, ময়ূর, তৃণভোজী প্রাণীর শেড ও গন্ধগোকুল প্রাণীর ঘর।
টিলাগড় ইকোপার্কে ঘুরতে আসা একাধিক দর্শনার্থী জানান,বিগত কয়েক বছর যাবত দেখে আসছি এখানে প্রাণীদের রাখার জন্য খাঁচা বানিয়ে রাখা হয়েছে। প্রাণীশূন্য খাঁচাগুলো অযতœ আর অবহেলায় মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বছরের পর বছর পার হচ্ছে খাচাঁর ভিতর আর প্রাণী আসছে না।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরএসএম মুনিরুল ইসলাম জানান, চিড়িয়াখানার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চিড়িয়াখানার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে বাঘ, জ্রেবা, ময়ূর, ভাল্লুক, বিভিন্ন জাতের পাখিসহ ১৮ প্রজাতির প্রাণী ক্রয় করা হয়েছে। এগুলো বর্তমানে গাজীপুরের সাফারী পার্কে রাখা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই কেন প্রাণী কেনা হয়েছে আর এগুলো অন্য পার্কে রেখে সিলেট থেকে কেন এ ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর তাঁর কাছে মিলেনি। তিনি আরো জানান, তিনি এখানে আসার আগেই গত অর্থবছরেই এ প্রাণীগুলো কেনা হয়েছে । এতে ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা।
মুনিরুল জানান, আগামি বছরই কার্যক্রমে যেতে চিড়িয়াখানার জন্য ২৭ জন স্টাফ নিয়োগের একটি আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্টাফ নিয়োগ না হলে কার্যক্রমে যাওয়া সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।