সিলেট সুরমা ডেস্ক:::::::: বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ হবার পর এখন নতুন কমিটিগুলো নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে বিস্তর আলোচনা।
বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে ক্ষমতাসীন দলের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটের কোনো প্রয়োজন হল না। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দলে যেভাবে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে সেখানে দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা কতটা গুরুত্ব পেয়েছে সেটি নিয়ে অনেকের প্রশ্ন আছে।
নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে অভিনন্দন জানাতে সোমবার সকাল থেকেই ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের সামনে ছিল শত-শত নেতা-কর্মীর উপছে পড়া ভিড়। ওবায়দুল কাদের যে সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন সেটি কাউন্সিলের আগেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জোরালো আভাস ছিল।
নেতৃত্ব নির্বাচনে যদি ভোটাভুটির প্রয়োজন না হয় তাহলে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা থেকে এত বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকায় জড়ো করে আওয়ামী লীগ কী অর্জন করলো? আগে থেকেই যদি নেতৃত্ব নির্ধারণ করা থাকে তাহলে কাউন্সিলের প্রয়োজন হলো কেন?
মুন্সীগঞ্জ আওয়ামী লীগের একজন নেতা আখতার হোসেন খান লাবু মনে করেন, সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটের প্রয়োজন না হলেও সর্বসম্মতভাবেই নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে।
আখতার খান বলেন, ‘এটা মতামতের ভিত্তিতেই হয়েছে। হয়তো ভোটাভুটি হয় নাই। নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, বিকল্প কোনো নাম নাই। তাহলে সেক্ষেত্রে এটা মতামত হল না? সেখানে তো জিজ্ঞেস করা হইছে বিকল্প কোনো প্রস্তাব আছে কিনা।’
আওয়ামী লীগের অনেক কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে পরিষ্কার বোঝা গেল নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাভুটি না হলেও সেটি নিয়ে তাদের মনে কোনো আক্ষেপ নেই। সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিয়ে তাদের মনে কোন প্রশ্ন নেই।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের যে শেখ হাসিনার পছন্দের প্রার্থী সেটি বুঝতেও কাউন্সিলরদের কোনো অসুবিধা হয়নি। সেজন্য সাধারণ সম্পাদক পদে বিকল্প কোন নামও আসেনি।
নেত্রকোনা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছিলেন ভোট না হওয়ায় বরং ভালোই হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভোটাভুটি হলে অনেক সময় দেখা যায় যে সঠিক নেতৃত্ব জায়গায় আসে না। তখন কালো টাকার ছড়াছড়ি হয় এবং নানা ধরনের প্রভাব থাকে। সেজন্য সঠিক নেতৃত্ব সঠিক জায়গায় নাও আসতে পারে।’
নেতৃত্ব নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রভাব যেমন স্পষ্ট, তেমনি দল পরিচালনাতেও তার কথাকে শেষ কথা মনে করেন নেতা-কর্মীরা। সেক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন না অনেক নেতা-কর্মী।
নাম প্রকাশ না করে জেলা পর্যায়ের একজন নেতা বলছিলেন, ‘পার্টির দিক-নির্দেশনা আসে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। উনি যাকেই নেবেন সেটা কোনো বিষয় না। উনার (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তেই কাজ হয় পার্টিতে। এটাই বড় ব্যাপার।’
সম্মেলনের আগের দিন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, নেতৃত্ব নির্বাচনে কী হতে যাচ্ছে সেটি তিনি এবং শেখ হাসিনা জানেন। এমন কথা সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।
আশরাফের কথায় একটা ইঙ্গিত মিলছিল যে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে শেখ হাসিনার ভূমিকাই হবে মুখ্য।
সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রাপ্তি তার রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। সেজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
কাদের বলেন, ‘আমি আমার পরিশ্রমের পুরষ্কার পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমার রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমি আমার নেত্রীর কাছে, আমার অভিভাবকের কাছে কৃতজ্ঞ।’
আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, শেখ হাসিনার পছন্দে তাদের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। তারা বলছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলে এমন একজন সাধারণ সম্পাদক প্রয়োজন যিনি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পারবেন। ওবায়দুল কাদের হয়তো সে বিবেচনাতেই এগিয়ে ছিলেন বলে তাদের ধারণা।