রফিকুল ইসলাম কামাল
উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন চলছে। শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে আজ রোববার বিকেলে। এ সম্মেলনেই সিলেটের অন্তত সাত নেতার ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তাঁরা পদ পাবেন নাকি শূন্য হাতে সম্মেলন থেকে ফিরবেন- আজই তা নির্ধারিত হওয়ার কথা।
আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে পদ পেতে পারেন, সিলেটের এমন নেতাদের মধ্যে তুমুল আলোচনায় রয়েছেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সহ সম্পাদক আজিজুস সামাদ ডন, হবিগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ এডভোকেট মো. আবু জাহির ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। এর বাইরে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমনও কিছুটা আলোচনায় রয়েছেন।
এসব নেতাদের মধ্যে যে কেউ সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেতে পারেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে কানাঘুষা চলছে। আবার এ পদ ছাড়াও অন্য কোনো পদে এসব নেতাদের কাউকে দেখা যেতে পারে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। বিশেষ করে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, শফিকুর রহমান চৌধুরী ও বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মধ্যে কোনো একজনের জন্য চমক অপেক্ষা করছে বলে ধারণা করছেন নেতাকর্মীরা।
মিসবাহ সিরাজ গত দুই মেয়াদ ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন। দলের জন্য সব সময় সরব এ নেতা সফলতা-ব্যর্থতার মিশেলে কাজ করে গেছেন মিসবাহ সিরাজ। এবারও তিনি এ পদের জন্য রয়েছেন বেশ আলোচনায়। তবে এবার তাকে নতুন কোনো দায়িত্বেও দেখতে পাওয়ার গুঞ্জন আছে।
শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। শফিক চৌধুরীর জনপ্রিয়তা, দলে অবস্থান এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে সিলেট-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনে কারারুদ্ধ হওয়া এই নেতা তাই গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার দৌড়ে আছেন শক্তভাবেই।
বদর উদ্দিন কামরানের জনপ্রিয়তা সবসময়ই তুঙ্গে। টানা দুইবার সিসিকের মেয়র ছিলেন তিনি। কারাগারে থেকেও মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। গত সিটি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর নতুন উদ্যমে দলের জন্য সিলেট চষে বেরিয়েছেন। কামরানও তাই আছেন আলোচনায়।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর দলের কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ করেন আবু জাহির। তার নেতৃত্ব দলের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হয়ে ওঠেন। এবার যোগ্য নেতৃত্বের পুরস্কার পেতে পারেন তিনি।
গত জাতীয় নির্বাচনে ডাক্তার মুশফিক বিএনপির সুজাত মিয়ার কাছে পরাজিত হওয়ার পর অনেকেই মনে করেছিলেন, এই বুঝি শেষ হলো মুশফিকের রাজনীতি! তবে শেখ হাসিনা তাকে মূল্যায়ন করে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক করেন। এবারের সম্মেলনে পেতে পারেন অন্য কোনো পুরস্কার।
মুহিবুর রহমান মানিক ১৯৯০ সালে ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জনপ্রতিনিধি হিসেবে পথচলা শুরু করেন। এরপর ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ এর জাতীয় নির্বাচনে হয়েছেন সাংসদ। ওয়ান-ইলেভেনে কারারুদ্ধ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মানিক রয়েছেন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আলোচনার।
আওয়ামী লীগের একসময়কার জাঁদরেল নেতা, প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ ডন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদে থাকা ডন এবারও আছেন পদ পাওয়ার দৌড়ে। সম্মেলনে তার পদ চমক হিসেবে আসতে পারে- এমন গুঞ্জন সিলেটের সর্বত্র।