ডাক্তার যোগেন্দ্র বিশ্বাস একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বড় ভাকৈর পশ্চিম ১ নং ইউনিয়নে চরগাঁওয়ে তার জ¤œ। তার বাবার নাম মৃত যতীন্দ্র মোহন বিশ্বাস,মা মৃত অহল্যা রানী বিশ্বাস। সে ১৯৫৫ সালে মেট্রিক পাশ করে। মেট্রিক পাশের পর ময়মনসিংহ ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুল থেকে ৪বছর মেডিকেল কোর্স শেষ করে পরে আরো ১বছর ইন্টারনী সহ ৫ বছর মেডিকেল কোর্স সমাপ্ত করেন। ১৯৬৫সালে মেডিকেল পাশ করে সিলেট সদর হাসপাতালে ফ্যামিলি ট্রেনিং করে মেডিকেল অফিসার হিসেবে গোলাপ গঞ্জ বিয়ানীবাজার উপজেলা ও কুমিল্লার থেওতা সরকারী হাসপাতালে চাকরি করেন। এভাবে কয়েক বছর চাকরি করার পর পাকহানাদার বাহিনী যখন দেশে আক্রমন করে, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙ্গালী জাতি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে তিনি ও তখন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধের পাশাপাশি তার পেশাকে কাজে লাগান। যুদ্ধাহতদের কে চিকিৎসা দেন। যেখানে শুনেছেন যুদ্ধে আহত সেখানে ছুটে যান। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধাহতদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। মুক্তিযুদ্ধা সহ স্বরনার্থীদের চিকিৎসার জন্য মুইলাম ক্যাম্পের ২থেকে ৭ নং সেকশনের চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে দক্ষতার সহিত চিকিৎসা দানের জন্য ব্যাঙ্গালুর থেকে আগত সেখানকার স্বনামধন্য চিকিৎসক রাজু ও ডাক্তার সানাই নামে দুইজন ডাক্তার ভুয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর কৃতিত্বের জন্য ডাক্তার যোগেন্দ্র কিশোর বিশ্বাস কে সনদ প্রদান করেন। যুদ্ধ শেষে পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে নিজ এলাকায় আসেন। তখনকার সময় সারা উপজেলায় কোন চিকিৎসক ছিলনা। হাতে গুনা ২/৩ জন চিকিৎসক ছিলেন তার মধ্যে তিনি দক্ষতার সাথে সুনাম অর্জন করেন। সর্বত্র এলাকায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে তার সুনাম। দুর দুরান্ত থেকে আগত রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে কাজ করাতে তখন স্বাধীনতা বিরোধী কুচক্র মহল পিছু লেগে যায় তাঁর। ১৯৭৬ সালে রাজাকার যুদ্ধপরাধীরা ডাকাত সেজে রাতে তার বাসায় হামলা চালায়। ডাকাতরা নগদ অর্থসহ লুট করে মুল্যবান কাগজ পত্রে আগুন ধরিয়ে পুড়ে দেয়। এ সময় তিনি নবীগঞ্জ উপজেলায় একটি জিডি করেন যার নং ৬/৭/১৯৭৬ ইং। সহায় সম্বল হারিয়ে ডাক্তার যোগেন্দ্র কিশোর বিশ্বাস নিস্ব হয়ে যান। যুদ্ধে কাজ করা এমনকি তার মেডিকেল পাশ করা সার্টিফিকেট ডাকাতরা পুড়ে ফেলাতে তার কাছে কোন প্রমান নেই। এমনিতে বাধা সৃষ্টি হওয়াতে মু্িক্ত যুদ্ধে তার নাম না থাকায় সারাটি জীবন তিনি এভাবেই আক্ষেপের মধ্যে কাটালেন। হালনাগাদ সরকার সঠিক মুক্তি যোদ্ধার নাম নেওয়াতে তাকে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠতে হয়। কয়েক বছর যাবৎ দৌড়া দৌড়ি করে কোন ব্যবস্থা না হওয়াতে তিনি অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছেন। মুক্তি যুদ্ধে কাজ করার কিছু ডকুমেন্টারী তার হাতে রয়েছে। স্বাধীনতার পর নিজ এলাকায় দীর্ঘ ৪২ বছর চিকিৎসার সেবায় নিয়োজিত রেখে বর্তমানে তিনি অসুস্থ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নিজের চিকিৎসার জন্য তিনি সিলেট শাহপরাণ গেইটের খাদিমপাড়া ইউনিয়নে বাহুবল এলাকায় বাস করছেন। একজন সঠিক মুক্তি যোদ্ধার মুল্যায়ন না পাওয়াতে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। তাঁর শারীরিক সুস্থতার জন্য উন্নত চিকিৎসার দরকার। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা সাথে আকুল আবেদন জানান তাঁর অধিকারটুকু ফিরিয়ে পেতে। সরেজমিনে সাক্ষাতে ডাক্তার যোগেন্দ্র কিশোর বলেন জীবন বাজি রেখে যুদ্ধাহত মানুষের পাশে যুদ্ধের পাশাপাশি আমার নিজ পেশাকে মানবকল্যাণে বিলিয়ে দিলাম আজ আমি অসহায় একজন সঠিক মুক্তিযোদ্ধার নাম টুকু থাকলে আমার জীবনটা স্বার্থক হত। লেখক- এম ইজাজুল হক ইজাজ,স্টাফ রিপোর্টার,দৈনিক যুগভেরী।