• ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নেই সংস্কার : ভোগান্তির শিকার যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ১৬, ২০১৬

 দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি ::::  সিলেট কদমতলীস্থ কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনালের সংস্কার কাজ ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায় সরকারের আমলে কিছুটা সংস্কার  করা হলেও এর পর আর কোন সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের ভোগান্তি চরমে।, টার্মিনালের ভেতর অসংখ্য গর্তে পানি জমে আছে। বাসের চাকা গর্তে পড়লে জমে থাকা পানি ছিটকে পড়ে যাত্রীদের ওপর। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় যত্রতত্র ময়লার স্তূপ। দুটি যাত্রীছাউনি আছে, কিন্তু সেখানে বসার পরিবেশ নেই। রাতে মাদকের আসর বসিয়ে নোংরা করে রাখা হয়। এমনি বেহাল দশা সিলেট কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের। দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় যাত্রী ও বাস শ্রমিকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পরিবহন নেতারা দাবিও জানিয়ে আসছেন, অথচ নেয়া হচ্ছে না সংস্কারের উদ্যোগ।
সরেজমিন দেখা গেছে, টার্মিনালটির পিছনে পানি বের হওয়ার জন্য দুটি নালা আছে। বৃষ্টি হলেই নালা থেকে ময়লা পানি উপচে টার্মিনালে ছড়িয়ে পড়ে। টার্মিনালের ভেতরে গাড়ি ও যাত্রীদের চলাফেরায় এসব গর্ত দুর্ভোগের কারণ হয়ে পড়েছে। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মহিলাদের সাথে নিয়ে শেডে যাওয়া যায় না। মাদকসেবীরা মদ্য পান করে খারাপ আচরণ করে। সুযোগ বুঝে তারা ছিনতাইয়ের কাজেও নেমে পড়ে। শেডের মধ্যে প্রাকৃতিক কাজ সারতে লিজকারীরা ৫/১০ টাকা নেন। অনেক সময় কাজ সেরে পানি পাওয়া যায় না। এসব সমস্যায় শুধু যাত্রীরা নন, পরিবহন শ্রমিকরাও দুর্ভোগের শিকার হন। মোটরের ব্যবস্থা না থাকায় বাহির থেকে পানি ক্রয় করে লিজকারীরা। বাথ রুমের ভেতর টিপ কলের ব্যবস্থা থাকলেও পানির টেবগুলো চুরি হয়ে গেছে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা জানান।
টার্মিনালের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক ল্যামপোস্টের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় রাত্রিবেলা যাত্রী সহ পরিবহন শ্রমিকদের ও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। ল্যামপোস্ট না থাকায় অন্ধকারের মধ্যে যাত্রীদেও গাড়িতে উঠানামা করতে হয়। এর দরুণ যাত্রী সাধারণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। টার্মিনাল এলকা অন্ধকার থাকার সুযোগে এক শ্রেণীর দুষ্টচক্রের তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় এ দুষ্টচক্রের কবলে পড়ে যাত্রীরা সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। এই চক্রটি ছিনতাই, পকেটমার ও যাত্রীদের সাথে থাকা মালামাল সুযোগ বুঝে নিয়ে চম্পট দেয়। তাছাড়া পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক লাইট পোস্ট না থাকায় অন্ধকারে মহিলা ও শিশু যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। টার্মিনালে আলাদা কোন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার না থাকায় পর্যাপ্ত আলো থাকে না। এখানে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার প্রয়োজন।
টার্মিনালের অভ্যন্তরে একটি পাকা দালানে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত একটি রেস্টুরেন্ট থাকলেও কিভাবে এই রেস্টুরেন্টটি অনুমোদন পেল তা টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের জানা নেই। মান সম্মত রেস্টুরেন্ট না থাকায় যাত্রীরা প্রধান সড়ক অতিক্রম করে কোনো রেস্টুরেন্টে যেতে হয়। এতে যাত্রীদের অনেকে সড়ক পারাপারের সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। বাইরের রেস্টরেন্টগুলোতেও মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয় না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। বাধ্য হয়ে দূরপাল্লা ও আভ্যন্তরীণ যাত্রীরা এসব খাবার খেয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এখানেই সমস্যার শেষ নয়, উন্নতমানের বিশ্রামাগার ও শৌচাগার না থাকায় যাত্রী সাধারণ বিশেষ করে মহিলা শিশু যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
টার্মিনালে ছোট ছোট অবৈধ দোকানপাটও বসিয়েছে একটি চক্র। এসব দোকানপাটের কারণে সহজে গাড়ি ঘুরাতে পারেন না চালকেরা। এতে টার্মিনালে যাত্রী ও গাড়ির জটলা তৈরি হচ্ছে। দোকান প্রতি ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা মাসোয়ারা নেওয়া হয়। লম্বা দুটি যাত্রীছাউনি আছে। কিন্তু নোংরা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যাত্রীরা ছাউনিতে না বসে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন বাসের। যাত্রীসাধারণের অভিযোগ, রাতে ছাউনিতে গাঁজাখোরদের আসর বসে। প্রতিদিন টার্মিনাল থেকে অসংখ্য যাত্রীবাহী দূরপাল্লা ও লোকাল বাস চলাচল করলেও যাত্রী সেবার মান নেই বললেই চলে। অসংখ্য বাস টার্মিনালের ভেতর থেকে যাত্রী না তোলে প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা হয় এতে যানজট লেগে থাকে। এছাড়া যাত্রী সাধারণকে গাড়িতে তোলার জন্য টানা হেচড়া করায় অনেক যাত্রীকে নাজেহাল হতে হয়।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, টার্মিনাল সংস্কারের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমরা সিটি কর্পোরেশনকে আল্টিমেটাম দিয়েছি। সংস্কার কাজ না হলে কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো। অনেকেই টার্মিনালে মাদকসেবীদের আনাগোনার কথা বললেও আমরা এদের অস্তিত্ব দেখতে পাইনা।
টার্মিনালের ইজারাদারের পক্ষে খন্দকার মহসিন কামরানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা লিজ নেওয়ার পর থেকে টার্মিনালকে সুন্দর করার জন্য নিজ উদ্যোগে অনেক কিছু করেছি কিন্তু সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন থাকায় তাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। টার্মিনালের সংস্কার কাজ করার জন্য আমরা সিটি কর্পোরেশনকে আবেদন করে আসছি। আশা করি সিটি কর্পোরেশন শীঘ্র্ই সংস্কার কাজ শুরু করবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতোমধ্যেই টার্মিনালটি সংস্কারের জন্য ৩০ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। শীঘ্রই বাস টার্মিনালটি সংস্কার করা হবে।
টার্মিনালে মাদকসেবীদের আনাগোনা সম্পর্কে টার্মিনাল ফাঁড়ি ইনচার্জ রিপন দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, টার্মিনালের ভেতরে মাদকসেবীদের আনাগোনা নেই। তবে যদি পাওয়া যায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।