আব্দুল খালিক :::::
নগরীতে সাম্প্রতিক ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দিনে অন্তত তিনবার বিদ্যুৎ না থাকাটা যেনো রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা, বিকেল ৩টা ও সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ থাকে না এমন অভিযোগ করে গ্রাহকরা বলেন, অসহনীয় গরমে বিদ্যুৎহীন ঘরে অবস্থান করা ধৈর্য্যরে বাহিরে। বিদ্যুৎ বিভাগ ইচ্ছে করেই আমাদের সাথে বিদ্যুৎ নিয়ে খেলছে। নগরীর বেশির ভাগ মানুষ সকালে ঘুম থেকে ওঠে মোটর ছেড়ে পানি তুলতে হয়। ঠিক সেই সময়টাতে বিদ্যুৎ নেই। এছাড়া, সন্ধ্যা হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। দেড় দুই ঘন্টার মধ্যেও আর খবর থাকে না। এসময় বিদ্যুৎ অফিসে বার বার ফোন করলেও রিসিভ হয় না।
বিদ্যুৎ বিভাগের এমন খামখেয়ালিতে যেকোন সময় ফুঁসে উঠতে পারে নগরবাসী। প্রতি মাসে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেও এমন ভোগান্তি যেনো মেনে নিতে পারছেন না তারা। এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়। সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ না থাকাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এ মাসের শুরুর দিকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষার মডেল টেস্ট শেষ হলেও প্রাইভেট বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে শরু হচ্ছে অস্টম শ্রেণীর মডেল টেস্ট এবং দশম শ্রেণীর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা। এতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে।
ভোগান্তির শিকার গ্রাহকরা জানান, কোন কারণ ছাড়াই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের এমন ঘটনা বিদ্যুৎ বিভাগ ইচ্ছে করেই করছে। ঘন ঘন লোডশেডিং-এর কারণে বাচ্ছাদের যেমন পড়ালেখার অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। তেমন ক্ষতি হচ্ছে আমাদের কর্মজীবনেও। বিদ্যুৎ না থাকায় রুমের ভেতর বসে কোনো একটি কাজও করা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো যাচ্ছে না। অসহনীয় গরমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণে মনযোগ থাকবে কিভাবে? একারণে, সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে গেলে আর রাত অবধি দেখা মেলেনি। এতে করে তাদের পড়ালেখা খুব বেশিই বিঘিœত হচ্ছে বলে দাবি করেন দক্ষিণ সুরমার একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা খামখেয়ালি করে বাচ্ছাদের এমন ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। অন্তত পরীক্ষার এই সময়টাতে নগরীতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দুর্ভোগের শিকার নগরীবাসী ক্ষোভের সাথে জানান, কোন কারণ ছাড়াই বার বার লোড শেডিং মেনে নেওয়া যাবে না। বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি থাকলে তা শীঘ্রই সম্প্রসারন করে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হোক। অন্যথায় নগরবাসী রাজপথে নামতে বাধ্য হবে।
দক্ষিণ সুরমা এলাকার বিদ্যুতের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জি,এম প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দক্ষিণ সুরমায় বিদ্যুতের কোন লোড শেডিং নেই। ওই এলাকায় খুব ভালই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে দিনে তিন বার বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা বিভ্রাট বলতে পারেন এবং সেটা কারিগরি সমস্যার জন্য হচ্ছে। সিলেটে আমাদের কিছু সাবস্টেশনের কাজ চলতেছে। এর মধ্যে মোগলাবাজার ১টি, দক্ষিণ সুরমা ১টি ও নশিওরপুর ১টি স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া, ঢাকায় চলছে জাতীয় গ্রীডে মেরামতের কাজ। যতদিন না সেটা সম্পন্ন হচ্ছে ততদিন এই বিভ্রাট ঠেকানো যাবে না। সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে নগরীতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এজন্য গ্রাহকদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে উত্তর সুরমা এলাকার বিদ্যুৎ বিভ্রাট সম্বন্ধে জানতে চাইলে, সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-১)’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, আমাদের কিছু কারিগরি সমস্যা রয়েছে। সংস্কার জনিত কারণে এমন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতেই পারে। তবে সেটা খুব শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।