মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :
২০ টাকার একটি লটারীতে মোটরসাইকেল পাওয়া যাবে এই লোভে কষ্টার্জিত আয়ের টাকা দিয়ে টিকিট কিনে lotary-1নিঃস্ব হচ্ছে মৌলভীবাজারের সবক’টি উপজেলার শ্রমিক, দিন মজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে গড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা হারে পুরো জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২১ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে লটারীর আয়োজনকারীরা। লটারীর টিকিট বিক্রি বেড়ে গেলে স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের। জানা যায়, মৌলভীবাজারের এম সাইফুর রহমান স্টেডিয়ামে আন্তঃকলেজ ফুটবল প্রতিযোগিতা উপলক্ষে ক্রীড়া উন্নয়নের নামে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে দৈনিক আশার আলো র্যাফেল ড্র নামক ২০ টাকা মূল্যের লটারী। প্রতিদিন রাত ১০টায় লটারীর ড্র অনুষ্ঠিত হয় যা স্থানীয় এমসিএস নামক ক্যাবলের মাধ্যমে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করে টিকিট ক্রয়কারীদের বিশ্বাস অর্জন করা হয়। ২০ টাকায় টিকিট কিনলে একটি ১০০ সিসি ওয়াল্টন মোটরসাইকেল, একটি সিএনটি অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়ার লোভে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে রিক্সা শ্রমিক, শ্রমিক, দিন মজুর, ছাত্র ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা জনপ্রতি ৫ থেকে ১০টি করে টিকিট ক্রয় করছেন। এভাবে প্রতিদিন উপজেলা গুলো থেকে ৩ লক্ষাধিক টাকা হারে জেলার সাতটি উপজেলা থেকে প্রায় ২১ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আর পুরস্কার দেয়া হচ্ছে ১ থেকে ২ লাখ টাকা মূল্যমানের। মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিক্সা পাওয়ার লোভে লটারীর টিকিট ক্রয় করে প্রতারিত হওয়া রিক্সা চালক হারিছ আলী, সুনিল, ধনঞ্জয়, আজিজ, দিন মজুর সেলিম মিয়া বলেন, এক সপ্তাহে কষ্টার্জিত আয় থেকে ৮০০ টাকার টিকিট ক্রয় করেও কোন পুরস্কার পাননি। অবৈধ লটারীর টিকিট বিক্রি করে সাধারণ মানুষদের প্রতারিত করা ও ব্যবসায় পাওয়াব ফেলা সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা বলেন, এ অবৈধ ব্যবসার তারা জোর প্রতিবাদ করছেন। এ অবৈধ ব্যবসায় লোভে পড়ে মানুষ কষ্টার্জিত টাকা ঢেলে দিচ্ছে। এতে নিজের ও এলাকার ব্যবসার ক্ষতি সাধন করছে। এ ব্যবসা অবিলম্বে বন্ধ করতে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের কাছে দাবী জানান। অবৈধ লটারী সামাজিক অবক্ষয়ের একটি অংশ। আর এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপরও। তাই অবিলম্বে তা বন্ধ করা উচিত বলে এক শিক্ষক জানান। লটারীর টিকিট বিক্রিকারীদের সাথে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে তারা বলেন, মালিকের পক্ষে তারা টিকিট বিক্রি করছেন। এ বিক্রির কোন অনুমোদন আছে কিনা তা তাদের মালিক বলতে পারবেন। একজন বলেন, আপনারা অহেতুক জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। এ বিষয়টি প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই হচ্ছে। টিকিট বিক্রয়কারীরা ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে লটারী আয়োজনকারীদের নাম পরিচয় জানা যায়নি বলে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করা যায়নি।
প্রকাশ্যে অবৈধ লটারীর টিকিট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া সম্পর্কে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা পিপিএম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিচ্ছু জানেন না। তিনি খোঁজ নিচ্ছেন, কুলাউড়ায় লটারী বিক্রির বৈধতা সম্পর্কে তিনি তাদের আটক করে জানবেন।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, ভাই এটা আমার দেখার বিষয় না, জেলা থেকে এ লটারীর আয়োজন করা হয়েছে, আপনারা জেলা থেকে এটা বন্ধ করার ব্যবস্থা নেন।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, আমি মাসখানেক আগে যোগদান করেছি, লটারীর ব্যাপারে কিছুই জানিনা।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বদরুল ইসলাম বলেন, কই নাতো, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক এ ব্যাপারে বলেন, আমার থানাতে লটারী বিক্রি হয় আমি জানতাম নাতো। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহবুবুর রহমান পিপিএম এ ব্যাপারে বলেন, যতদূর জেনেছি জেলা সদর থেকে এই লটারীর আয়োজন করা হয়েছে। আপনি এ ব্যাপারে জেলায় আয়োজককারীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে (সদ্য যোগদানকারী) জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লটারী বিক্রির বিষয়টি তিনি জানার পর এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাকে অবগত করেছেন সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান থাকাকালীন সময়ে লটারী বিক্রির বিষয়ে নাকি একটি রেজুলেশন হয়েছিল। তিনি তাকে ওই নথিপত্র গুলো দেখানোর জন্য বলেছেন। জেলা প্রশাসক জানান বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।