• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শাবিতে ভর্তির পর থেকেই বেপরোয়া ছিল বদরুল !

sylhetsurma.com
প্রকাশিত অক্টোবর ৫, ২০১৬

শাফী চৌধুরীঃ
সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার নার্গিসের উপর হামলাকারী পাষন্ড শাবি ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে হল ভাঙচুর ও লুটপাটসহ নানা অভিযোগ, তাছাড়া সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) ভর্তির পর থেকেই বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করতো। এমনকি ২০১২ শাবিতে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘষের প্রধান নায়ক ছিলো এই বদরুল।আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেপরোয়া চলাফেরার কারণেই মূলত তার উত্থান। ইতোমধ্যে ঘাতক বদররুলকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বদরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ০৮-০৯ সেশনের অনিয়মিত শিক্ষার্থী।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,ঘাতক বদরুল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার চেচানবাজারের সোনাইগাতি গ্রামের সৌদি প্রবাসী সাইদুর রহমানের পুত্র। সাইদুর রহমানের ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বদরুল ছিল দ্বিতীয়।তার পারিবারিক স্বচ্ছলতা তেমন নেই। ২০১১ সালে সাইদুর রহমান দেশে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিশেহারা পরিবারের হাল ধরেন বদরুলের বড় ভাই। তিনি পেশায় দর্জি ব্যবসায়ী। পরিবারের মেধাবী সন্তান হিসেবে পরিবারে বদরুলের মূল্যায়ন ছিল সবার চেয়ে বেশী। শাবিপ্রবিতে পড়ার কারণে তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। তার ছোট ভাই কৃষি কাজ করে। ছোট বোন ও আরেক ছোট ভাই লেখাপড়া করছে। এলাকায় তেমন একটা পরিচিতি ছিল না বদরুলের। শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সে নিজেকে পরিচিত করতে এলাকায় রাজনৈতিক সহযোগীদের নিয়ে যাতায়াত করত।
এ ছাড়া অনার্স শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে তিনি গোবিন্দগঞ্জ আলহাজ আয়াজুর রহমান স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।
ছাতকের নতুনবাজার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বদরুল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র হিসেবে অনার্স শেষ করে। সে শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছে।
সূত্রে আরো জানা গেছে,২০০৮ সালে বদরুল সিলেট এসে প্রথমে আউশা গ্রামে লজিং মাষ্টার হিসেবে উঠে। সেখান থেকে সে শাবিতে যাতায়াত করতো। শাবিতে ভতি হওয়ার পর থেকে সে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করে। ২০১২ সালে ১১ জানুয়ারি বদরুলের নেতৃত্বে শাবির হলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ । এ সময় ছাত্রলীগ শিবির নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় শাবি শিবিরের কয়য়েকটি মোটর সাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে ১৬ জানুয়ারি সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের জাঙ্গাইল এলাকায় বদরুলের ওপর হামলা হয়। আর এ হামলার শিকারের পর থেকে আলোচনায় উঠে আসে বদরুল।তখন বদরুলের উপর হামলার প্রতিবাদে ১৭ জানুয়ারি স্থানীয় টুকের বাজার এলাকায় লাটি মিছিল করে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ। আর এভাবে বদরুল হয়ে উঠে শাবি ছাত্রলীগ নেতা। শাবি ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় পর থেকে বদরুলের চলাফেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে মারধর করতেন।
সর্বশেষ সোমবার বিকেলে এমসি কলেজ মসজিদের পেছনে সরকারি মহিলা কলেজের অনার্সের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় বদরুল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ এবং হামলাকারীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের সোপর্দ করে। এ ছাড়া আহত কলেজছাত্রীকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তার ভাই নূর আহমদ।
এদিকে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অনার্সের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর হামলাকারী বদরুল আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে বদরুলকে শাবি থেকে সাময়য়িক বহিস্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়া বলেন, এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বদরুল আলমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন শাহপরান হলের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রভোষ্ঠ শাহেদুল হোসাইন ও সহকারী প্রক্টর ড. মুনশী নাসের ইবনে আফজাল।
কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তাছাড়া শাবি শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বদরুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যপারে শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ জানান, বদরুল আলম শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। তিনি ২০০৮-০৯ সেশনে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। মহিলা কলেজের ছাত্রীকে কোপানোর ঘটনায় বদরুল আলমের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। গত ছয়-সাত মাস ধরে বদরুল কোনো মানসিক সমস্যায় ছিল বলে মনে হয়। এ কারণে সংগঠন থেকে দূরে ছিলেন।
আহত কলেজছাত্রীর ভাই নূর আহমদ জানান, বদরুল একজন সন্ত্রাসী। সে বিভিন্ন সময়ে তার বোনকে উত্ত্যক্ত করত। খাদিজা প্রতিবাদ করায়ই সে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহ পরান (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল মুন্সি জানান, আহত খাদিজা আক্তারের চাচা বাদি হয়ে বদরুলকে একমাত্র আসামী করে মঙ্গলবার মামলা হয়েছে।বদরুল পুলিশ হেফাজতে ওসমানি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
তিনি আরো জানান, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে বদরুল ও খাদিজার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি খাদিজা বদরুলকে এড়িয়ে চলতে শুরু করায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদশন করেছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান।