প্রতিবাদের ঝড় সিলেটজুড়ে
স্টাফ রিপোর্টার
এটুকুই হয়তো বাকি ছিলো বর্বরতার ষোলকলা পূর্ণ হতে। সোমবার এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেপরোয়া চাপাতির কোপ পড়লো ছাত্রীর শরীরে। সিলেটের সভ্যতার ইতিহাসে বর্বর এমন কান্ড এই প্রথম।
এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেছে শাবি’র এক ছাত্র। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে এমসি কলেজ পুকুর পাড়ে এ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। খাদিজা আক্তার নার্গিস নামের ওই ছাত্রী সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের ডিগ্রী ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে শহরতলীর জালালাবাদ থানার আউশা গ্রামের মাসুক উদ্দিনের মেয়ে।
গুরুত্বর জখম খাদিজাকে মুমূর্ষু অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাত ৮টায় এ রির্পোটটি লেখার মূহূর্তে খাদিজা আক্তারের অপারেশন চলছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। মাথার উপরিভাগে মারাত্মক আঘাত থাকার কারণে সে এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় সাড়ে তিনঘন্টাব্যাপী অস্ত্রপাচারে নার্গিসের শরীরে অন্তত ১০ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছেÑ জানান চিকিৎসকরা। সিটি স্ক্যান করে অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হবে বলে পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হামলাকারী শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র বলে জানিয়েছে পুলিশ। পাষন্ড এ ছাত্রের নাম বদরুল ইসলাম (২২)। তার বাড়ী সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায়।
প্রত্যাক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার এমসি কলেজে খাদিজা আক্তারের ডিগ্রি ২য় বর্ষের পরীক্ষা ছিলো। বিকাল ৫টায় পরীক্ষা শেষ করে সে এমসি কলেজের পুকুর পাড়ে আসা মাত্র তিনজন যুবক তার পথ আগলে রাখে। এ সময় বদরুল ধারালো চাপাতি দিয়ে তাকে উপর্যপরি কোপাতে থাকে। খাদিজার মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক আঘাত করে বদরুল। এক সময় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে খাদিজা। পরে হামলাকারীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা বদরুলকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে পুলিশ এসে আটক করে বদরুলকে। সেও বর্তমানে ওসমানীতে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, দিনে-দুপুরে এমন বর্বর কান্ডে সিলেটজুড়ে তোলপাড় চলছে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে সর্বত্র। ফেসবুক সয়লাব হয়ে যায় খাদিজা আক্তারের রক্তাক্ত চিত্রে। ঘটনার মুহূর্তে সেলফোনে ভিডিও করা ভয়ানক সেই মুহূর্তের চিত্র গতকাল ভাসতে থাকে ফেসবুক ওয়ালে। দৃশ্যে দেখা যায়, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন খাদিজা। আর ঘাতক বদরুল উপর্যুপরি কোপাচ্ছে। সে সময় পরীক্ষা শেষে বের হওয়া বেশ ক’জন শিক্ষার্থী পাশে দাঁড়িয়ে লোমহর্ষক এ দৃশ্য দেখছেন আর চিৎকার করছেন। দু-একজন বাঁচাতে এগিয়ে আসতে চাইলেও ভয়ে ফের পিছু হটেন। কিন্তু এত মানুষের ভিড়েও অনেকটা নির্লিপ্তই ছিলো বদরুল। খাদিজা মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারানোর পরও বেপরোয়াভাবে চাপাতি দিয়ে মাথায় কোপাতে থাকে সে।
ওদিকে, হামলাকারী বদরুল শাবি ছাত্রলীগ শাখার সহ-সম্পাদক বলে জানা গেছে। শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ জানিয়েছেন, ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবেরর মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছিল বদরুল ইসলাম। তারপর থেকে তার মানষিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সে শাবির ২০০৮-২০০৯ বর্ষের শিক্ষার্থী । শিবিরের হামলার শিকার হওয়ায় শাবি ছাত্রলীগ তাকে সহ-সম্পাদকের পদ দিয়েছিল।
বদরুলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশের প্রতি আহবান জানিয়ে শাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খাঁন বলেন, অন্যায়কারীদেরকে কোন সময় ছাত্রলীগ প্রশ্রয় দেয় না। অবিলম্বে বদরুলের বিরুদ্ধে নেয়া শাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নেয়া হবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। আজ সকাল ১০টায় নার্গিনের উপর হামলার প্রতিবাদে এমসি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
শাহপরান থানার ওসি শাহজালাল মুন্সী সিলেট সুরমাকে জানান, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, প্রায় ছয় বছর থেকে বদরুলের সঙ্গে খাদিজার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। ছেলেটি খাদিজার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সে তেমন পাত্তা দিতো না। আর তা থেকেই এমন কান্ড ঘটে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) সহকারী কমিশনার বাসু দেব জানান, হামলাকারীকে আমরা আটক করেছি। ধারণা করা হচ্ছে বিষয়টি প্রেমঘটিত। তিনি জানান ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসা শেষে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।