সেই মাঠ, সেই সবুজ ঘাস। যেখানে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন এক কাব্য। ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে হারানোর পর সে কি উল্লাস। লাল-সবুজ পতাকা হাতে গ্যালারিতে দর্শক আর মাঠে একদল কিশোরের আনন্দ-উচ্ছাস আজও কোটি প্রাণে দোলা দিয়ে যায়। বাঁধভাঙা উল্লাসের মাঝেই মাইকে বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল সাফ অনুর্ধ্ব- ১৬ চ্যাম্পিয়ানশীপে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। সাদ উদ্দিন আর সরওয়ার জামান নিপুর কানে এখনও বাজে মধুর সেই ঘোষণা, পুরো টুর্নামেন্টের ছবিটা দুজন বাঁধিয়ে রেখেছেন মনের গহীনে। এক বছর পর ঐতিহাসিক সেই মঞ্চে আবারো এলেন দুই কিশোর।
তবে এবার দৃশ্যপট পুরোপুরি ভিন্ন। সাফে বাংলাদেশকে শিরোপা উপহার দেওয়ার অন্যতম কারিগর এ দুজন। সাদ-নিপু জুটির আক্রমনেই তো ভারত আফগানিস্তানের মতো শক্তিও স্রেফ উড়ে গেছে। দুজন মিলে গোল করেছেন, একজনের গোলের নেপথ্যেও ছিলেন আরেকজন। জমে যাওয়া সেই জুটি এখন আলাদা হয়ে আছে। সুখ স্মৃতির সেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সাদ-নিপু এলেন একজন আরেকজনের প্রতিপক্ষ হয়ে।
সিলেটে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ শুরুর দিনই মাঠে ছিলেন উঠতি দুই তারকা। তবে চেনা সেই গালিচা দুজনকে দিয়েছে দুই রকমের অভিজ্ঞতা। সিলেটের ছেলে সাদ খেলেছেন ঢাকা আবাহনীতে। রোববার সিলেটে ঢাকা আবাহনীর প্রতিপক্ষ ছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। আকাশী- নীল জার্সি গায়ে সাদের খেলা দেখবেন বলে অনেকেই এসেছিলেন মাঠে। কিন্তু শেখ রাসেল আবাহনীর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ানোও জর্জ কোটান তার নতুন তুর্কিকে মাঠে নামানোর সাহস দেখাননি। লোকাল হিরো তাই ম্যাচের পুরোটা সময় জুড়েই ছিলেন সাইড বেঞ্চে। সাদের ঢাকা আবাহনীতে যোগ দেওয়া নিয়ে সিলেটে প্রায়ই আলোচনা হয়। সহযোদ্ধা, শুভাকাঙ্খী অনেকের কাছেই সাদের সেই সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি। কারণও আছে, এখনও ঢাকা আবাহনী তাকে একবারের জন্যও পরীক্ষায় নামায়নি। তাই ছোট দলে নাম লেখালে হয়ত নিয়মিত খেলতে পারতেন সাফের হিরো। তবে সাদ এটা মানতে নারাজ। ঢাকা আবাহনীর মত বড় দলে খেলার যুক্তি তুলে ধরেন এভাবে- দেখুন, ছোট দলে যোগ দিলেও আমি যে নিয়মিত খেলতে পারতাম তার নিশ্চয়তা কে দিত? বিষয়টি মাথায় রেখেই আমার ঢাকা আবাহনীতে যাওয়া। এখানে বেঞ্চে বসেও যা শিখছি তা আমার আগামীর পথচলায় দারুণ কাজে আসবে।
তবে সাদ এখনও ঢাকা আবাহনীর জার্সি গায়ে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখেন, দেখেন আরো বড় কিছুর। আর সেটা অবশ্যই লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়িয়ে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন।
সারওয়ার জামান নিপু অবশ্য ঐতিহাসিক মঞ্চে আরেকবার চেনালেন নিজেকে। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে এর আগে ফেনী সকার ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচে খেলেছেন। সিলেটে প্রথম ম্যাচেই ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেলেন দ্বিতিয়ার্ধে। ম্যাচের তখন ৭২ মিনিট। বা প্রান্ত থেকে আসা ক্রসে মাথা ছুইয়ে করলেন ম্যাচের সেরা গোল। নিপুর এই গোলেই ব্রাদার্সকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়ে পুরো তিন পয়েন্ট পায় শেখ জামাল। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে এক বছর পরও সমান উজ্জ্বল কিশোরগঞ্জের কিশোর। নিপুর কাছে অবশ্য সাফ অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ দুই রকমের অভিজ্ঞতা হয়ে আছে। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে বাংলাদেশকে ফাইনালে নিয়ে আসলেও শিরোপা জয়ের দিন খেলতে পারেননি। টানা দুই ম্যাচে দুই হলুদ কার্ড নিপুকে সেদিন দর্শক বানিয়ে রেখেছিল। তাই বলে কোনো আফসোস নেই তার। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দলের অন্য সবার সঙ্গে বাধভাঙ্গা উচ্ছাসে মেতেছেন। সেই টুর্নামেন্টের সব স্মৃতি আজও নিপুকে আনন্দ দেয়। ভুলতে পারেননি সিলেটের মাঠ আর দর্শকদের। ভুলেন কি করে? এই সিলেট যে আরেকবার নায়ক বানিয়ে দিল সাফজয়ী কিশোরকে।