• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

প্রেমিক উধাও

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি :::::::
অবশেষে নবীগঞ্জের বরাক নদী থেকে উদ্ধার করা লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। সে নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী তন্নী রায় (১৮)। নিখোঁজের ৩ দিন পর তন্নীর হাত-পা বাধা লাশ বস্তাবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কাটছে না রহস্যের জট। শাখা বরাক নদীর নবীগঞ্জ শহরতলীর আক্রমপুর এলাকার গড়মুড়িয়া ব্রীজের নিকট থেকে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সাড়ে ৫ টার দিকে লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে লাশ উদ্ধারের পর থেকে পুরো নবীগঞ্জ জুড়ে এ আলোচনা চলছে। শোকের মাতম চলছে নিহত তন্নীর পরিবারসহ স্বজন পরিজনদের মাঝে। শোকের ছায়া নেমে এসেছে সর্বত্র। তন্নী প্রেমের বলি কিনা তা নিয়ে রয়েছে গুঞ্জন। আলোচনায় বেড়িয়ে এসেছে রানু নামের এক ছেলের নাম। তবে কে এই রানু, সে এখন কোথায়, খুঁজছে পুলিশ। এ দিকে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র নবীগঞ্জ ছুটে যান। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহত তন্নী রায়ের পিতা বিমল রায়ের বাড়ী উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের পাঞ্জারাই গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নবীগঞ্জ পৌরসভার শিবপাশা আবাসিক এলাকার ধান সিঁড়িতে স্ত্রী, এক ছেলে ও নিহত কলেজ পড়ুয়া কন্যা তন্নীকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তন্নী রায় (১৮) নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে গত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে। পরীক্ষার পর তন্নী নবীগঞ্জ শহরের আই.সি.টি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়। শনিবার(১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে তন্নী রায় আই.সি.টি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। নির্ধারিত সময় সে বাসা ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন তাকে খোজতে শুরু করেন। কিন্তু সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজির পরও তন্নীকে না পেয়ে ওই দিন রাতেই নবীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। নিখোঁজের পর থেকেই তন্নীর পিতা-মাতা, ভাইসহ আত্মীয় স্বজনরা ছিল চরম উৎকণ্ঠা ও আতংকের মধ্যে। তাদের নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে বরাক নদীতে মাছ ধরতে যায় এক লোক। সে আক্রমপুর এলাকার গড়মুড়িয়া ব্রীজের নিকট পানিতে নেমে মাছ ধরাকালে হঠাৎ একটি বস্তা দেখতে পায়। আর এ বস্তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। মুহূর্তে খবরটি প্রচার হলে লোকজন ঘটনাস্থলে এসে ভীড় জমায়। এক পর্যায়ে এক লোক একটি লাঠি দিয়ে নাড়াচাড়া করলে বস্তাটি ছিড়ে গেলে এর ভেতরে একটি মানুষের লাশের কিছু অংশ বেরিয়ে আসে।
খবর পেয়ে এক দল পুলিশ নিয়ে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল বাতেন খান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পুলিশ বস্তাটি নদীর পাড়ে নিয়ে এসে বস্তা থেকে হাত-পা বাধা লাশটি বের করে। কিন্তু মৃতদেহের চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় সনাক্ত করা যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তন্নী রায়ের ভাই। সে তার বোনের লাশ কি না তা সনাক্ত করতে পারেনি।
পরে মৃতদেহটি উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তন্নীর পিতা বিমল রায় ছুটে আসেন। তিনিও লাশের বিকৃত অবস্থা দেখে মেয়ের লাশ কি না তা সনাক্ত করতে পারেন নি। এক পর্যায়ে মৃতের কোমরে একটি চাবি পাওয়া যায়। ওই চাবি নিয়ে বাসার একটি তালা খোলার পর নিশ্চিত হওয়া যায় এটা ১৭ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হওয়া তন্নীর লাশ।
শুরু হয় স্বজন-পরিজনদের মাঝে কান্নার রোল। নেমে আসে শোকের ছায়া। শুরু হয় এ হত্যার ঘটনা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জের সবজি বিক্রেতা কানু রায়ের ছেলে রানু রায়ের সাথে তন্নীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার পর থেকে রানু রায় নিরুদ্দেশ। এতে সন্দেহের তীর চলে যাচ্ছে রানুর দিকে। অনেকের ধারনা, ফুসলিয়ে হউক বা জোড় পূর্বই হোক তন্নী রায়কে ঘটনাস্থলের আশপাশে কোথাও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এক পর্যায়ে হয়তো কোন কারণ উপজাত হলে তন্নীকে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দী করে বরাক নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র নবীগঞ্জের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার নিহত তন্নীর পিতা সহ আত্মীয় স্বজনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, তন্নীকে হত্যার সাথে যে বা যারা জড়িত তাদের স্বল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে। হত্যাকারী যত প্রভাবশালীই হোক কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।