• ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সংর্ঘষ

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : ফার্মেসির সামনে গাড়ি রাখাকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলাবাসীর সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ১৫জন।  গতকাল সোমবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত লামাকাজি ব্রিজের উপর বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলাবাসীর মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে প্রায় ৩ঘন্টা যান-চলাচল বন্ধের পাশাপাশি কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০০ রাউন্ড রাবার বুলেট, ৩৩ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ৫৫জনকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৭সেপ্টেম্বর) বিকেলে লামাকাজী বাজার পয়েন্টে ফার্মেসীর সামনে অটোরিক্সা রাখা নিয়ে ফার্মেসীর মালিক সদর উপজেলার হাউসা গ্রামের আখতার হোসেন ও অটোরিকশা স্ট্যান্ডের ম্যানেজার বিশ্বনাথ উপজেলার মির্জারগাঁও গ্রামের আব্দুশ শহিদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়।
এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিশ্বানাথের মির্জারগাঁয়ের আব্দুশ শহিদের পক্ষ নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলাবাসী এবং সিলেট সদরের আখতার হোসেনের পক্ষ নিয়ে সদর উপজেলাবাসীর মধ্যে গত ২দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এতে সংঘর্ষ এড়াতে শনিবার বিকেল থেকে লামাকাজি এমএখান ব্রিজের উভয় পার্শ্বে পুলিশ মোতায়ের করা হয়। দু’দিন আগের এঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার (১৯সেপ্টেম্বর) সকালে উভয় পক্ষ নদীর দুই তীরে আবারও অবস্থান নেয়। উত্তপ্ত হয়ে পড়ে পুরো লামাকাজি এলাকা। পরিস্থিতি বেগতিক জানতে পেরে দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মধ্যস্থতায় নামেন। একপর্যায়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর কাছে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য সমঝোতা বৈঠকের প্রস্তাব দেন। আর এতে বিশ্বনাথবাসীও সাড়া দেন।
এরপর বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সদর উপজেলাবাসীর কাছে যান। উভয় উপজেলার চেয়ারম্যান, প্রশাসনিক কর্মকর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সদর উপজেলাবাসীর কাছে আপোষ প্রস্তাব দেন। উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দের কথাবার্তা চলাকালে সদর উপজেলাবাসীর একটি অংশ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর উপর হামলা করতে এমএ খান সেতুর উপর চলে আসেন। আর তাদের প্রতিরোধ করতে  বিশ্বনাথবাসীও সেখানে অবস্থান নেন। ইটঁপাটকেল নিক্ষেপে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়ে প্রায় পৌনে ২ঘন্টাব্যাপী উভয় পক্ষের সংঘর্ষে বিশ্বনাথ থানা পুলিশের এসআই হাবিবুর রহমান, শুভ্র সাহা, কনষ্টেবল খালিকুজ্জামান, গোলাম কিবরিয়া, মানিক মিয়া, রানা হোসেন ও সালেহ আহমদসহ ৭পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাাড়া উভয় পক্ষে গুলিবিদ্ধসহ আরও শতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে এসময় পুলিশ পুলিশ ২০০ রাউন্ড রাবার বুলেট, ৩৩ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের পর বিক্ষোদ্ধ সিলেট সদর উপজেলাবাসী সুনামগঞ্জগামী একটি বাস (ঢাকা মেট্রাে-জ ১১-০৮৪৫) ও একটি লেগুণা (সিলেট-থ ১১-২২৬৪) ভাংচুর করে।সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের আহতরা হলেন, সদর উপজেলার আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধরা হলেন- আখতার হোসেন, উকিল আলী, মকদ্দুছ আলী, আব্দুল মালিক, বারিক মিয়া, আহতরা হলেন- মনির মিয়া, নিজাম উদ্দিন, মকদ্দুছ মিয়া, জাহেদ মিয়া, সুহেল মিয়া, মাহবুব মিয়া, আব্দুস সালাম, দিলোয়ার মিয়া, মুছাম উদ্দিন, আজমল হোসেন, মানিক মিয়া, ইউসূফ আলী।বিশ্বনাথ উপজেলার আহতরা হলেন- গুলিবিদ্ধ আব্দুশ শহিদ, তারেক আহমদ, আকমল হোসেন, জুয়েল মিয়া, আফজল হোসেন, বাকি আহতরা হলেন- হামিদুর রহমান, মৌরশ আলী, আরশ আলী, মারুফ মিয়া, পাভেল আহমদ, সোহেল আহমদ, তামিম আহমদ, জাহেদ মিয়া, তাজুল ইসলাম, শিশু মিয়া, রুহুল আমিন, খসরু মিয়া, মতিন মিয়া, সোহেল মিয়া, মোহন মিয়া, চাদনুর, সুহেল মিয়া, মুন্না, আব্দুল কালাম, হায়দর আলী, মুসাদ্দিক হোসেন, আব্দুল কাহার, রিয়াজুল ইসলাম, আকমল, জাকারিয়া, বশারত আলী, ছাদিকুর রহমান, আলমগীর হোসেন, বাবুল মিয়া, ছাদেক আলী, সোহাগ মিয়া, জাহেদ মিয়া, আল-আমিন, কামরুল হোসেন, আব্দুল্লাহ, আজির উদ্দিন, মক্তার মিয়া, আফাজ আলী, আব্দুল করিম, জাকির, লালসাদ, সুন্দর আলী, রিয়াজুল হক, আব্দুল কাদির, জুনেদ, রপিক মিয়া।
এদিকে সংঘর্ষের আগে উভয় উপজেলায় অনুষ্ঠিত সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার ফয়ছল মাহমুদ, সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর সার্কেল) ধীরেন্দ্র মহা পাত্র, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মাহবুবুল আলম, বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিতাভ পরাগ তালুকদার, বিশ্বনাথ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম পিপিএম, গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক একেএম দুলাল, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নুর উদ্দিন, কান্দিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, লামাকাজী ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া, দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী, রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর, খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন, মোগলগাঁও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল ইসলাম টুনু, অলংকারীর ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে বৈঠক করেন সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, বিশ্বনাথবাসী সব সময় শান্তির পক্ষে। সিলেটবাসীও চান এলাকার পরিস্থিতি শান্ত থাকুক। সমাজের কিছু উশৃঙ্খল ব্যক্তির উসকানীমূলক আচরণের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
বিশ্বনাথ থানার ওসি মনিরুজ্জামান, ২০০রাউন্ড রাবার বুলেট ৩৩রাউন্ড টিয়ারসেল (গ্যাসগান) নিক্ষেপের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ফের সংঘর্ষ এড়াতে লামাকাজি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুজ্ঞান চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লামাকাজিতে উত্তেজনার খবর পেয়ে সোমবার সকাল থেকেই ব্রীজের পশ্চিম প্রান্তে লামাকাজি পয়েন্টে তারা অবস্থান নেন। কিন্তু বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব প্রান্তের লোকজন ব্যারিকেড ভেঙ্গে পশ্চিম প্রান্তে আসার চেষ্টা করলে দুপক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আনে।
সুজ্ঞান জানান, এ ঘটনায় তাদের ৬-৭জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।