ডা. মো. নাজমুল ইসলাম ::::
মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মানবজাতিকে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত করতে প্রতি বছর আমাদের মাঝে হাজির হয় এই উৎসব। ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল এই দিনটি তাই ত্যাগের আদর্শ অনুসরণের তাগিদ দেয়। মহান আল্লাহতায়ালার আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রায় চার হাজার বছর আগে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ শিশুপুত্র ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। এর মধ্য দিয়ে ইসলামের ইতিহাসে ত্যাগের এই অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। সেই থেকে বিশ্ব মুসলিম প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ প্রিয় পশু কোরবানি করে থাকেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। বিশ্ব মুসলিমের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামীকাল সোমবার দিনের শুরুতেই ঈদগাহে বা মসজিদে সমবেত হয়ে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় ইমাম বর্ণনা করবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে এক কাতারে নামাজ আদায়, কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে নিজ নিজ পশু কোরবানি করবেন। আনন্দের দিনে অশ্রুসিক্ত হয়ে অনেকেই যাবেন কবরস্থানে, তাদের বাবা-মাসহ প্রিয়জনদের রুহের মাগফিরাত কামনার জন্য।
ধর্মীয় বিধান মতে, কোরবানি করা শর্তসাপেক্ষে ওয়াজিব। অর্থাৎ বিত্তশালী বা যিনি কোরবানি দিলে আর্থিকভাবে অনটনে পড়বেন না, তার জন্যই কোরবানি করা উত্তম। কোরবানির ব্যাপারে পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা হজে বলা হয়েছে, তোমাদের জবেহকৃত হালাল পশুর রক্ত, গোশত, খুর, পশম কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না, আল্লাহর দরবারে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (খোদাভীতি)।
এই কোরবানি বা ঈদের প্রধান শিক্ষা ‘ত্যাগ’ ছাড়া আরও একটি বড় শিক্ষা হল আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। যে কারণে জবেহকৃত পশুর গোশতের একটি অংশ গরিব-দুঃখীর মাঝে বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। এর বাইরে কোরবানি দাতার নিকটাত্মীয়ের মাঝেও গোশত বিতরণের নির্দেশনা আছে।
১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা শুরু হয়। মোট তিন দিন পশু কোরবানি করা যায়। সেই হিসেবে ১১ ও ১২ জিলহজও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ ১০ জিলহজ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত কোরবানি করা যায়।
ইতিমধ্যেই দেশের সব ঈদগাহ ময়দান ও মসজিদ ঈদের জামায়াতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ও ইসলামের আদর্শ অনুসরণ করার জন্য শত বিড়ম্বনা ও কষ্ট উপেক্ষা করে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরেছেন।
যদিও এবার এখন পর্যন্ত মহাসড়কে বিড়ম্বনা তুলনামূলক কম বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এরপরও মূলত মহাসড়ক দখল করে পশুর হাট বসানো এবং ঢাকামুখী পশুর ট্রাকের কারণে এই অযাচিত বিড়ম্বনা বলে জানা গেছে। আর এ কারণে এবারও অন্যান্য বছরের মতোই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের শিকার হয়েছে ঘরমুখো লাখো মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে যাওয়ার প্রধান দুই ফেরিঘাট মাওয়া এবং পাটুরিয়ায়ও যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘরমুখো মানুষদের। লঞ্চের অবস্থা এবার তুলনামূলক কিছুটা ভালো হলেও মানুষের ভোগান্তি কম ছিল না। আর এবারও ট্রেনের সিডিউল ল-ভ- হয়ে যায়। একইভাবে এবার বাসের সিডিউলেও বিপর্যয় ঘটেছে।
এই ঈদের অন্যতম আকর্ষণ পশু। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র পশুর হাটগুলো ছিল জমজমাট। এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে গরু ও ছাগলের সরবরাহ শুরু থেকেই ভালো। যে কারণে রোববার পর্যন্ত দাম বেশ সস্তা ছিল। তবে আকস্মিকভাবে সোমবার পশুর দাম হাটভেদে বেড়ে যায়। ফলে পশু কেনাকাটায় গত বছরের স্বস্তি এবার আর মেলেনি।