আশিস রহমান,দোয়ারাবাজার থেকে:
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বৈঠাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। দেশের আর দশটি বিদ্যালয়ের চিত্র যেখানে একরকম সেখানে বৈঠাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র ব্যতিক্রমী। উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত বৈঠাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অজোপাড়া গাঁয়ের শিশুদের হাতেখড়ির একমাত্র মাধ্যম। সুদূর কয়েক গ্রাম পেরিয়ে পাশের গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে এলাকার বেশিরভাগ শিশুদেরই প্রাইমারিই গন্ডি পার হবার আগেই ঝরে পরতে হয়। শিশুদের ঝরে পরা রোধ করতে এলাকার বৈঠাখাইসহ আশপাশের দুই তিনটি গ্রামের আপামর জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৪সালে স্থাপিত হলেও আর্থিক ও অবকাঠামো গত অসচ্ছলতার দরুন বিলম্বে ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এলাকার দুইশতাধিক এরও অধিক শিক্ষার্থী উক্ত প্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশোনা করছে। বিগত ২০১৩সালের ১লা জুলাই দ্বিতীয় দাপে বৈঠাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয় করন হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনো পর্যন্ত বিনা বেতনে পাঠদান করে চলছেন বিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা। বেতন না পাওয়ার পরে তারা হাল ছাড়েননি। এখনো পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষক/শিক্ষিকা উক্ত বিদ্যালয়টির শিক্ষার মানোন্নয়ের লক্ষ্যে নিজেদেরকে সক্রিয় ভাবে আত্মনিয়োগ রেখেছেন। এদিকে দীর্ঘদিন যাবত উক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাবৃন্দ বেতন না পাওয়ায় তাদের পরিবারের বরন পোষন চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেড নির্মিত বৈঠাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় অনেকটা অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে। ভবন সংকটের কারনে একই রুমে বিদ্যালয়ের অফিস কার্যক্রম ও পাঠদান করা হচ্ছে। তাও আবার পর্যাপ্ত বেঞ্চ না থাকার কারনে কোমলমতি শিশুরা মাটিতে বসে ক্লাস করছে। শ্রেণী কক্ষের কোনো রুমের দরজা আছে জানালা নেই আবার কোনোটির জানালা আছে দরজা নেই। ফলে বৃষ্টি আর রোদ কোনোটি থেকেই রেহাই পাচ্ছেনা বৈঠাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীরা। এতে করে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের একমাত্র টিউবওয়েলটিও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে বিধায় স্কুল চলাকালীন সময়ে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পরেন সবাই। দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি লেট্রিন থাকলেও বৈঠাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কোনো ধরনের লেট্রিন নেই। পার্শ্ববর্তী বাজারে বিদ্যুতের সংযোগ আছে কিন্তু এখানে বিদ্যুতের কোনো সংযোগ নেই। এ যেন দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার এক করুন চিত্র। বিদ্যালয়টি হাওর এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় প্রতি বছরই ঝড়ের কবলে পড়ে বিরামহীন ভাবে প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, নানাবিধ সমস্যায় জর্জরির হওয়ার কারণে এখানে মারাত্মকভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত অভিভাবক ও স্থানীয়রা। দ্রুত সংকট দূর করা না গেলে পাঠদান কার্যক্রম ভেঙে পড়বে বলেও তারা জানান। বৈঠাখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, শিক্ষকদের বেতন সমস্যা ও বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদির মেম্বার বিদ্যালয়ের সার্বিক সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানান। যোগাযোগ করা হলে এবিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এই বিদ্যালয়ের বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। এ বিদ্যালয়ের ওপর উপাজেলা প্রশাসনের বিশেষ নজর আছে। এর আগে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা বিতরণ করা হয়েছে। উক্ত বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।