সুলতান সুমন :::: সিলেটে এখনো জমে উঠেনি কোরবানীর পশুর হাট। বাজার ভর্তি গরু থাকলেও বিকি-কিনি এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। ক্রেতার চাহিদায় পশুর দাম বেশি হওয়ায় সামঞ্জস্য তৈরি হচ্ছে না। ফলে বিকি-কিনি অনেকটা কমতি আছে। বৃহত্তম পশুর হাট কাজিরবাজারসহ সিলেটের সবগুলো হাটে শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের পশু। কিন্তু দাম আকাশচুম্বি। পশুর হাটে আসা গরু ব্যাবসায়ীরা (পাইকার) বলছেন, গরুর দাম বেশি হওয়ার মূল কারণ হলো গরুর সঙ্কট। তবে ক্রেতারা মনে করছেন ঈদের দুই থেকে তিনদিন আগে পশুর হাট ভরপুর থাকবে গরুতে। দামও তখন অনেকটা কমবে। অন্যদিকে বৈধ পশুরহাট ইজারাদাররা মনে করছেন, পথে পথে অবৈধ পশুর হাট বসানোর কারণে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন গরু ব্যাপারীরা। ফলে এখনও জমে উঠেনি পশুর হাট। সরেজমিনে দেখা গেছে, পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে নগরীর অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। হাটগুলোর প্রবেশমুখে সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি বাঁশের খুঁটি ও তার দিয়ে ঘের তৈরি করা হয়েছে পশু রাখার জন্য। পোস্টারের পাশাপাশি পশু বিক্রির জন্য মাইকেও জোরেশোরে চালানো হচ্ছে প্রচার, চলছে লিফলেট বিতরণ। পাড়া-মহল্লার অলিগলি ছাড়িয়ে ব্যস্ত সড়কের দেয়ালে দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে পশুর হাটের প্রচারের পোস্টার। বাদ যায়নি অভ্যন্তরীণ পরিবহনগুলোও। বাস-ট্রাকেও লাগানো হয়েছে পশুর হাটের পোস্টার। ইজারাদাররা পশু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করেছেন এরই মধ্যে। দুয়েকদিন আগে থেকেই পশুবাহী ট্রাক আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন হাটে। সেখানে বিক্রেতাদের পাশাপাশি আসছেন ক্রেতারাও। বিক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিও চলছে ক্রেতাদের। তবে জমে উঠেনি বেচাবিক্রি। অন্যদিকে অতীতের মতো এবারও ইজারা পাওয়া নির্ধারিত জায়গার বাইরে হাট বসানোর চেষ্টা করছেন ইজারাদাররা। অভিযোগ রয়েছে, হাটগুলোর মূল সীমানার বাইরে এরই মধ্যে বাঁশের খুঁটি পোঁতার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, নগরীর কাজিরবাজার একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট। স্বল্প পরিসরে গরু বেচাকেনা শুরু হয়েছে এ হাটে। সিলেট জেলার আশপাশের উপজেলা থেকে কিছু ক্রেতা এসেছেন এখানে। রয়েছেন নগরীতে বসবাসরত ক্রেতারাও। তবে যাদের বাড়িতে গরু রাখার পর্যাপ্ত জায়গা আছে তারাই শুধু গরু কিনছেন এখন। ব্যাপারীরা মনে করছেন, এখন গরু ক্রেতার থেকে দর্শনার্থী বেশি। গরু বেচাকেনা জমজমাট হবে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর থেকে। সেভাবে জমজমাট করারই জোর প্রস্তুতি চলছে পশুর হাটে। হাটের বাইরে ও আশপাশে চলছে আনুষঙ্গিক নানা উপকরণের বেচাকেনা। শুকনো খড়, ভূষি, কাঁঠাল পাতার মতো গো-খাদ্যের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে পশুকে সাজানোর জন্য রঙিন কাগজের মালা, রঙিন দড়ি ও লাঠি। গত শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দল বেঁধে হাটে প্রবেশ করতে দেখা যাচ্ছিল অনেককে। হাটে আসা স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের কাউকে কাউকে দেখা গেল কোরবানির সুন্দর পশুটির সঙ্গে সেলফি তুলতেও। গরুর হাটে আসা ক্রেতা খায়রুর রহমান এবাদ বলেন, গরু আজকে কিনব না। বাজারের পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। এখন গরু কিনে রাখব কোথায়? তবে বাজেটের চেয়ে গরুর দাম একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। গরু ব্যাপারীরা মনে করেন, ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে আবার গরুর দামের হেরফের হয়ে যেতে পারে। যেমন কাঁচামাল ও গরুর মধ্যে তফাৎ (পার্থক্য) নেই। ঈদের গরুর বাজার লটারির মতো। কখন কী হয় বলা যাবে না। চাঁদ রাতের দিনও বদলাতে পারে বাজার পরিস্থিতি। দাম একটু বাড়লেও হাটে গরুর কোনো অভাব নাই। তবে ভারতীয় গরু না আসলে কিছু পয়সা আয় করতে পারবে গরু বিক্রেতারা। আর এরই মধ্যে যদি বর্ডার খুলে দেয়া হয় তাহলে কিছু লোকসান হবে ব্যাপারীরে। এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) দুইটি পশুর হাটের ইজরা দিয়েছে। এর একটি হলো কয়েদির মাঠ ও অপরটি কমতলী এলাকায়। এ দুই হাটে এখনও চলছে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু না আসায় জমে উঠেনি এ দুই হাট। অপরদিকে, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে নগরীতে ততই বাড়ছে অবৈধভাবে কোরবানীর পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে অস্থায়ী হাট বসাতে অধিকাংশ সড়কের পাশেই বাঁশের খুঁটি স্থাপন করতে দেখা গেছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর সড়ক মহাসড়কের উপর কোরবানীর পশুর অবৈধ হাটের সংখ্যা বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর এমনটা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সরকার থেকে ইজারা দেয়া বৈধ হাটের ইজারাদার ও মালিকগণ। যদিও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সড়ক-মহাসড়কের পাশে কোনো পশুর হাট বসবে না। জানা যায়, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী কোরবানীর পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে। কোথাও কোথাও এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে জোরপূর্বক পশুবাহী গাড়ী আটক করে পশু নিয়ে এসে হাট বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আখালিয়া বিজিবি মাঠ, শাহজালাল উপশহরের পয়েন্টের পাশে, চালিবন্দর ক্রীড়া উন্নয়ন ভবনের মুখ, বালুচর খেলার মাঠ, মাছিমপুর (গ্যাস অফিসের পিছন) ও মেন্দিবাগ পয়েন্ট। এসকল অবৈধ পশুর হাট বসানো নিয়ে কয়েকটি এলাকায় সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটেছে। কিছু এলাকায় পশুর হাট বসানো নিয়ে চলছে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি। এসব এলাকায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সচেতন মহলের অনেকেই মনে করছেন, পুলিশ এ ব্যাপারে আগে-ভাগেই যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে নগরীজুড়ে যেমন দুর্ভোগ বাড়বে তেমনি এসব হাটকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজী ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়ে যাবে। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাস্তার উপর কোনো পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। যদি বসানো হয় তবে তাদেরকে আটক করে হাট ভেঙ্গে দেয়া হবে। তবে জেলার ১২ উপজেলার সকল কুরবানীর পশুর হাটের ইজারাদারদের সাথে মতবিনিময় করেছেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান। গত শনিবার সকালে জেলা পুলিশ লাইন্সের শহীদ এসপি এম শামসুল হক মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভা আয়োজনের জন্য পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভায় ইজারাদাররা কুরবানীর পশুর হাটে জাল টাকা সনাক্তকরণের মেশিন, পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা পশুর হাট বন্ধ করাসহ সিলেটের পশুর হাটে কুরবানীর পশু আনার সময় রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে জোর করে পশুর হাটে গরু রেখে দেয়া রোধ করার জন্য অনুরোধ করেন। সভাপতির বক্তব্যে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান কোরবানীর পশুর হাটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। তিনি হাটের ইজারাদারদেরকে পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রত্যেকে স্ব-উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করার অনুরোধ করেন। তিনি টাকা পরিবহনে প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা রোধে হাট এলাকায় অপরিচিত পান দোকানদার, চায়ের ফেরিওয়ালাসহ বিভিন্ন অপরিচিত ব্যক্তিদের খাদ্যদ্রব্য বিক্রির দিকে নজরদারি রাখার পরামর্শ প্রদান করেন। পশুর হাটের কারণে যাতে রাস্তায় কোনো ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি না হয় সেদিকে এবং যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে সহায়তার জন্য আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় সিলেট জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।