• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় ভাবে এখনো উপেক্ষিত মহানায়ক

sylhetsurma.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১, ২০১৬

malekজেনারেল আতাউল গণি ওসমানী। বাংলাদেশের স্বাধীন ভূখন্ডের সাথে ওৎপ্রাতভাবে জড়িত আছে নামটি। পাকিস্তানি নিপীড়নের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এই ডাকে সাড়া দিয়ে ওসমানীর নেতৃত্বে হয়েছিল নয় মাস বিরামহীন যুদ্ধ। এজন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক উপাধি দেয়া হয় তাঁকে। কিন্তু এই ‘উপাধি’তেই সীমাবদ্ধ এখন এই বীরের সকল কীর্তি। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও এখনো উপেক্ষিত তিনি।  মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, ইতিহাসের মহান বীর আতাউল গণি ওসমানীকে এখন তেমনভাবে স্মরণ করে না কেউ। রাষ্ট্র, দল কিংবা জাতিÑ কারোরই স্মরণ-সম্মানে নেই মহান এই ব্যাক্তি। মুক্তিযুদ্ধে এই বীরের অবদানও জানেনা নতুন প্রজন্ম। তাঁর জন্ম কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে দেশের হাতেগোনা কিছু সংগঠন আলোচনা সভার আয়োজন করলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যান তিনি। অথচ এই বীরের নেতৃত্বেই সংগঠিত হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস বিরামহীন যুদ্ধ শেষে জন্ম হয়েছিল প্রিয় জন্মভূমির।  মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর আতাউল গণি ওসমানীর ৯৮তম জন্মবার্ষিকী আজ। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি তাঁর জন্মদিনে। এমনকি সিলেটে কৃতিসন্তান হিসেবে সিলেট বিভাগেও কোনো অনুষ্ঠানের অয়োজন করেনি সরকার। জেলা পরিষদ কিংবা জেলা প্রশাসন থেকেও গৃহীত হয়নি কোনো কর্মসূচি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই অবহেলীত বাংলার ইতিহাসের মহান এই ব্যাক্তিত্ব। স্বাধীনতার পর ওসমানীকে মূল্যায়ন করতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তাঁর নামকরণ করা হয়। এই নামকরনের মধ্যেই মূল্যায়িত হয়ে আছেন ওসমানী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান বা জিয়াউর রহমান যেভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেন দেশ ও জাতির কাছে, সেভাবে মূল্যায়িত হচ্ছেন না ওসমানী।  বাঙালি জাতির মহান বীর জেনারেল ওসমানী। অকুতোভয় এই বীরের কমান্ডে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয় দীর্ঘ নয়মাস। পাকিস্তানি হায়নাদের নির্যতন-নিপিড়নে বিধ্বস্ত হয় পুরো বাংলা। কিন্তু মাথা নত করেননি বাংলার সাহসী এই মহান নেতা। সুসজ্জিত পাকিস্তানি সেনাদের সাথে স্বল্প অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেন। জাতিকে উপহার দেন স্বাধীন-স্বর্বভৌম মাতৃভূমি আর লাল সবুজের পতাকা।  ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাবা খানবাহাদুর মফিজুর রহমানের কর্মস্থল সুনামগঞ্জে জন্ম হয় ওসমানীর। ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারী পাইলট স্কুল থেকে ১ম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন তিনি। এই সময়ে ১ম বিভাগ ছিলো খুবই দুরুহ। ১৯৩৮ সালে ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওগ্রাফিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন ওসমানী।  দ্বিতীয় মহাযুদ্ধও সময় থেকে ওসমানী সেনা ক্যারিয়ারে পদার্পণ করেন। ১৯৩৯ সালে ইন্ডিয়ান মেলিটারি একােিডমিতে প্রশিক্ষন নেন তিনি। প্রাশক্ষণ শেষে দক্ষতার সাথে কাজ করতে থাকেন ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীতে। চৌকশ কর্মে সেনা ক্যারিয়ারে দ্রুত উন্নতি করতে থাকেন তিনি। ১৯৪০ সালে ইন্ডিয়ান আরমিতে আরটিলারী অফিসার পদে ল্যাফটেন্যান্ট কমিশন পান। ১৯৪১ সালে তিনি ক্যাপ্টেইন পদমর্যদা পান। মাত্র ২৩ বছর বয়সে ১৯৪২ সালে আর্মি মেজর বনে ইতিহাস গড়েন এই মহান ব্যাক্তি। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ল্যাফটেনেন্ট কর্ণেল পদে উর্ণিত হয়ে যুক্ত হন পাকিস্তান আর্মিতে। ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান আরমি থেকে অবসর নিয়ে বাংলার রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। শেখ মুজিবের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭০ সালে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগের হয়ে তৎকালীন নির্বাচনে বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে অংশ নিয়ে এমএলএ নির্বাচিত হন তিনি। পাক হায়নাদের নিপীড়ন থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে হবে শেখ মুজিবের এই মহান ব্রতে যুক্ত হয়ে ১৯৭১ সালে শুরু করেন মুক্তি যুদ্ধ। সর্বাধিনায়ক হিসেবে নয়মাস যুদ্ধ করে মুক্ত করেন প্রিয় বংলা।  রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি বাংলার কুট রাজনীতির শিকার হচ্ছেন জেনারেল ওসমানী। না হলে দেশের পরতে পরতে আজ উজ্জিবিত থাকত ওসমানীর নাম। জাতি মহান সম্মানে সর্বদা স্মরণ করত মহান এই বীরকে। এই কুট রাজনীতি থেকে বেরিয়ে মহান এই নেতাকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদানের আহবান তাদের।  ওসমানীনগর উপজেলা বাস্তবায়নের দাবি ওসমানীনগর উপজেলা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে জেনারেল সেমানীর এলাকা ওসমানীনগরবাসী। প্রায় দুই লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ এলাকার জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবি ওসমানীনগর উপজেলা বাস্তবায়ন। তাদের দাবি ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের আমলে বৃহত্তর থানাগুলোকে পৃথক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মরহুম এমএজি ওসমানীর নামানুসারে ওসমানীনগর নামে একটি নতুন থানা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ১৯৯৫ সালের ১ মে এটাকে পুলিশী থানায় উন্নীত করা হয়। এলাকার জনসাধারণের দানকৃত ভূমির উপর তাজপুর-গোয়ালাবাজারের মধ্যবর্তী স্থানে ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারি এ থানার ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শাহ আজিজুর রহমান। ১৯৯৯ সালের ৩০ মে নতুন ভবন উদ্বোধন করেন পুলিশের ডিআইজি তোফাজ্জল হোসেন। পরে ২০০১ সালের ২২ মার্চ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ওসমানীনগর থানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ওসমানীনগরকে অচিরেই উপজেলায় উন্নীত করার আশ্বাস দেন। পরে তৎকালীন স্পীকার মরহুম হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীও একই আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্থানীয় তাজপুরবাজারে এক নির্বাচনী জনসভায় উপজেলার দাবি উত্থাপিত হলে তিনি ওসমানীনগরকে উপজেলায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। বিগত জোট সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে ১১টি থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হলেও ওসমানীনগর আশ্বাসের বৃত্তেই থেকে যায়। ২০০৬ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমাসহ ৪টি থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ সুরমাকে উপজেলায় উন্নীত করা হলেও বঞ্চিত রাখা হয় ওসমানীনগরকে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ দপ্তর সম্পাদক ওসমনীনগরের বাসিন্দা জগলু চৌধরী সিলেট সুরমাকে বলেন, সব সরকারের আমলেই ওসমানী অবমূল্যায়িত হয়ে আসছেন। ওসমনীকে আমরা সঠিক সম্মান জানাতে পারছি না। তিনি বলেন, ২ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ২৮০.৩৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট বৃহত্তর বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলে ৮টি ইউনিয়ন ও ২৯৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ওসমানীনগর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করনের যাবতীয় প্রশাসনিক সুবিধাদি বিদ্যমান রয়েছে। ওসমানীনগরে রয়েছে ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি মহিলা কলেজসহ ৩টি কলেজ, ২টি বেসরকারি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ১টি জিজিটাল টিএন্ডটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ২টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ২টি পশু চিকিৎসা উপকেন্দ্র, সরকারী খাদ্য গুদাম, সরকারী বীজ ঘর। এছাড়াও নাজির বাজার থেকে শেরপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক এ থানার অন্তর্ভূক্ত। ফলে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। পল্লী বিদ্যুৎ, ব্রাক, আশা, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে ওসমানীনগরে। তাই মহান এই বীরের নামকরনে গঠিত এই থানাকে উপজেলায় রুপান্তরের দাবি জানান তিনি। এতে ওসমানীর নামকে যেমন সম্মান জানানো হবে পাশাপশি ইতিহাসেও চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন মহান এই ব্যক্তি এমনটিই মনে করেন সিলেট আওয়ামী লীগের এই নেতা।