• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আজ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ‘শুভ জন্মাষ্টমী’

sylhetsurma.com
প্রকাশিত আগস্ট ১০, ২০১৫

সিলেট সুরমা ডেস্ক::::: দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণে আবির্ভূত সনাতন ধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ শুভ জন্মতিথি। হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উত্সব। শুভ জন্মাষ্টমী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে, পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই তাদের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই দিনে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। পাশবিক শক্তি যখন সত্য সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই অসুন্দরকে দমন করে জাতিকে রক্ষা এবং শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয় তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উত্সবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞের আয়োজন করেছে হিন্দু সম্প্রদায়। বিভিন্ন মন্দিরের আয়োজকরা জানিয়েছেন, আজ সকালে ষোড়শ উপচারে পূজা শেষ করে প্রসাদ বিতরণ ও ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। আজ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে কৃষ্ণপূজা এবং কাল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
হিন্দুরা বিশ্বাস করেন কৃষ্ণ ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করতে কংস, জরাসন্ধ ও শিশুপালসহ বিভিন্ন অত্যাচারিত রাজাদের ধ্বংস করেন এবং ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দু ধর্মমতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাকে কেন্দ্র করেই জন্মাষ্টমী উত্সব। ঐ সময় অসুররূপী রাজশক্তির দাপটে পৃথিবী হয়ে ওঠে ম্রিয়মাণ, ধর্ম ও ধার্মিকরা অসহায় সংকটাপন্ন অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হন। অসহায় বসুমতি পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মার পরামর্শে দেবতারা সবাই মিলে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে। সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের যুগসন্ধিক্ষণে তারা সকলে বিষ্ণুর বন্দনা করেন। স্বয়ং ব্রহ্মা মগ্ন হন কঠোর তপস্যায়। ধরণীর দুঃখ-দুর্দশায় ব্যথিত হয়ে দেবতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি দেবতাদের অভয়বাণী শোনান এই বলে যে, তিনি অচিরেই মানবরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হবেন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানরূপে শঙ্খ, চক্র, গদাপদ্মধারী শ্রীকৃষ্ণ নামে।
ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের নির্দেশ দিলেন এই ধরাধামে তার লীলার সহচর হওয়ার প্রয়োজনে এই ধরণীতে জন্ম নেয়ার জন্য। ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশমত দেবতারা তাদের স্ব স্ব পত্নীসহ ভগবানের কাঙ্ক্ষিত কর্মে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে যদুকুলে বিভিন্ন পরিবারে জন্ম নিতে থাকেন। এভাবে ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য দেবতাদের মর্ত্যলোকে অবতরণ। বসুদেব দেখলেন, শিশুটি চারহাতে শঙ্খ, চক্র, গদা এবং পদ্ম ধারণ করে আছেন। নানারকম মহামূল্য মণি-রত্নখচিত সমস্ত অলঙ্কার তার দেহে শোভা পাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারলেন জগতের মঙ্গলার্থে পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণই জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের ঘরে। বসুদেব করজোড়ে প্রণাম করে তার বন্দনা শুরু করলেন। বসুদেবের বন্দনার পর দেবকী প্রার্থনা শুরু করলেন এবং প্রার্থনা শেষে একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করতে বললেন শ্রীকৃষ্ণকে।
একজন সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করে শ্রীকৃষ্ণ বললেন, আমি জানি, আপনারা আমাকে নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত এবং কংসের ভয়ে ভীত। তাই আমাকে এখান থেকে গোকুলে নিয়ে চলুন। সেখানে নন্দ এবং যশোদার ঘরে একটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। আমাকে ওখানে রেখে তাকে এখানে নিয়ে আসুন। শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে বসুদেব সূতিকাগার থেকে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন। গোকুলে নন্দ এবং যশোদার সন্তানরূপে যিনি জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি হলেন ভগবানের অন্তরঙ্গ শক্তি যোগমায়া। যোগমায়ার প্রভাবে কংসের প্রাসাদে প্রহরীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। কারাগারের দরজা আপনা আপনি খুলে গেল। সে রাত ছিল ঘোর অন্ধকার। কিন্তু যখন বসুদেব তার শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে বাইরে এলেন তখন সবকিছু দিনের আলোর মত দেখতে পেলেন। আর ঠিক সেই সময় গভীর বজ্রনিনাদের সঙ্গে সঙ্গে প্রবল বর্ষণ হতে শুরু হল। বসুদেব যখন শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বৃষ্টির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ভগবান স্বর্পরূপ ধারণ করে বসুদেবের মাথার উপরে ফণা বিস্তার করলেন। বসুদেব যমুনা তীরে এসে দেখলেন যমুনার জল প্রচণ্ড গর্জন করতে করতে ছুটে চলেছে। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর রূপ সত্ত্বেও যমুনা বসুদেবকে যাবার পথ করে দিলেন। এভাবে বসুদেব যমুনা পার হয়ে অপর পাড়ে গোকুলে নন্দ মহারাজের ঘরে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে তিনি দেখলেন সমস্ত গোপগোপীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সেই সুযোগে তিনি নিঃশব্দে যশোদার ঘরে প্রবেশ করে শ্রীকৃষ্ণকে সেখানে রেখে যশোদার সদ্যজাত শিশুকন্যাকে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে এলেন। নিঃশব্দে দেবকীর কোলে শিশুকন্যাটিকে রাখলেন। তিনি নিজেকে নিজে শৃঙ্খলিত করলেন যাতে কংস বুঝতে না পারে যে ইতিমধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে।
শ্রীকৃষ্ণ অবতারের দুটি উদ্দেশ্যঃ অন্তর্জগতে মানবাত্মার উন্নতি সাধন ও বাহ্য জগতে মানবসমাজের রাষ্ট্রীয় বা নৈতিক পরিবর্তন সাধন।