• ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ভাবির ওপর প্রতিশোধ নিতেই….!

sylhetsurma.com
প্রকাশিত আগস্ট ১১, ২০১৫

সংবাদদাতা, আর্থিক দৈন্য আর বিদেশ যেতে না পারার হতাশার মাঝে ভাবির উপহাসের প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন তাহের উদ্দিন এলাইছ ওরফে শাহ আলম। তিনি আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন, ভাবিকে হত্যার সময় অন্যরা সেখানে এসে পড়ায় তাদেরও ছুরিকাঘাত করেন। হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসাদ বেগমের খাস কামরায় বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শাহ আলম।  পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিন খুনের ঘটনায় নিহত জাহানারা বেগমের ভগ্নিপতি মো. মোহন মিয়া বাদি হয়ে বুধবার সকালে মাধবপুর থানায় শাহ আলমকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এদিকে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শাহ আলমের জবানবন্দির বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ১১ বছর শাহ আলম কুয়েত ও গ্রিসে প্রবাসী ছিলেন। সেখান থেকে তিনি তার ভাবি জাহানারা বেগমের কাছে উপার্জিত টাকা পাঠান। সাড়ে তিন বছর আগে শাহ আলম গ্রিস থেকে দেশে ফেরেন। এরপর থেকে তার পাঠানো টাকা ফেরত পাওয়া ও সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভাবির তার সম্পর্ক খারাপ ছিল প্রায় দুই বছর ধরে।
এরই মধ্যে শাহ আলম বিয়ে করেন। তার একটি সন্তানও রয়েছে। আর্থিক কষ্টে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করছিলেন। সম্প্রতি শাহ আলম ইরাক যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন। ১৯ আগস্ট তার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফ্লাইট হবে না জানতে পেরে ১৮ আগস্ট তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তখন থেকে ভাবির উপহাসের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। মঙ্গলবার বিকেলে শাহ আলম স্থানীয় বাজারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে ভাবি জাহানারা বেগম তাকে উদ্দেশ্য করে নিজের মেয়ে শারমিন আক্তারকে উপহাস করে বলেন তোমার আর বিদেশ যাওয়া হবে না। শাহ আলম জবানবন্দিতে বলেন, একাধিকবার এমন বলার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভাবিকে খুন করবেন। রাতে রান্নাঘর থেকে ছুরি নিয়ে ভাবির ঘরে ঢুকে তাকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন তিনি। এ সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। মায়ের চিৎকার শুনে তার মেয়ে শারমিন ও ছেলে সুজন এগিয়ে গিয়ে জাহানারাকে জড়িয়ে ধরলে তাদেরও ছুরিকাঘাত করেন শাহ আলম। ছুটে আসেন শাহ আলমের বৃদ্ধা মাও। তিনি এমন অবস্থা দেখে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশী শিমুল মিয়া এসে এমন অবস্থা দেখে ঘরে থাকা একটি সাবল শাহ আলমের দিকে ছুড়ে মারেন। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে শিমুল মিয়াকেও ছুরিকাঘাত করেন শাহ আলম।
আহতদের মধ্যে জাহানারা বেগম ঘটনাস্থলেই মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে শিমুল মিয়া ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর শারমিন মারা যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় সুজন মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহম্মদ সাজেদুল ইসলাম পলাশ জানান, শাহ আলম স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ হত্যাকা- তিনি একাই ঘটিয়েছেন। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে ভাবিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র। তিনি জানান, শাহ আলম হত্যাকা-ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি মূলত ভাবিকেই হত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার সময় অন্যরা ছুটে আসায় তারাও হামলার শিকার হয়।এদিকে বুধবার দুপুরে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত করা হয় হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকালে শিমুলকে দাফন করা হয়। আর সন্ধ্যার পর দাফন করা হয় জাহানার ও শারমিনের মরদেহ।মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকতাদির হোসেন রিপন জানান, তাদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে শাহ আলম ছাড়া আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।