স্পোর্টস রিপোর্টার :: ফুটবল কিংবা ক্রিকেট, কিংবা অন্য যেকোনো খেলাই হোক, শেষ পর্যন্ত কট্টর ক্রীড়াপ্রেমীই হোন আর সাধারণ দর্শকই হোন- ফলাফলটাই মনে রাখেন। ম্যাচে কোনো দল ভালো খেললো, কোনো দলের আধিপত্য ছিল- ম্যাচ শেষের ফলাফলে তা অনেকটাই গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। বলাই বাহুল্য, ফলাফলটাই এখানে মুখ্য। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বুধবার সন্ধ্যায় সিলেটের বিপক্ষে পুরো ম্যাচজুড়ে আধিপত্য ছিল মৌলভীবাজারের। ম্যাচের ৩ মিনিটে গোলের জন্য আক্রমণ শুরু করেছিল সিলেট, কিন্তু দিনের শুরু দেখে সব সময় যে শেষের ফলাফল নাও মিলতে পারে! আর তাই পরবর্তীতে পুরো ম্যাচজুড়ে মৌলভীবাজারের ছন্দময় ফুটবল। শেষের বেলায় সুযোগের সদ্বব্যবহারে গোল করে বিজয়ীর হাসি সিলেটের। তবে, পুরো ম্যাচে দারুণ খেলে দর্শকদের হাততালি পাওয়া মৌলভীবাজার ম্যাচের অন্তিম মুহুর্তে রেফারির প্রতি আক্রোশের দৃষ্টিকটু প্রদর্শনীতে দুয়োধ্বনি শুনেছে।
ম্যাচের ৩ মিনিটেই আক্রমণে ওঠে সিলেট। পরের মিনিটেই ডি বক্সের ঠিক বাইরে ফ্রি কিক কাজে লাগাতে ব্যর্থ তারা। ম্যাচের ১২ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ওঠে মৌলভীবাজার। কিন্তু ডি বক্সের ভেতরে বল পেয়ে পোস্টের বাইরে দিয়ে মারেন ফরোয়ার্ড জায়েদ আহমদ। এরপর ম্যাচের বাকি সময় একের এক আক্রমণ শানিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা দল। কিন্তু প্রতিপক্ষের জালে কাঁপন ধরাতে পারেনি তারা। সিলেট জেলা দলের গোলরক্ষক সুহেলের দৃঢ়তা ছিল পুরো ম্যাচেই। দারুণ কয়েকটি সেভ করে দলকে গোল খাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তিনি।
ভাগ্যও এদিন সহায় ছিল না মৌলভীবাজারের। না হয় ম্যাচের ৪০ মিনিটে দলটির অধিনায়ক জনির জোরালো শট কেন সিলেটের গোলপোস্টে লেগে ফেরত আসবে! এছাড়া দ্বিতীয়ার্ধের ৭ মিনিটে ডি বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েও বাইরে মারেন সুফিল। ১৫ মিনিটে ডি বক্সে হেডের সহজ সুযোগ মিস করেন জায়েদ।
পুরো ম্যাচে বিবর্ণ থাকা সিলেট ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহুর্তে পেয়ে যায় কাঙ্খিত গোলের দেখা। বদলি খেলোয়াড় খালেদের পাস থেকে বল পেয়ে যান মতিন। মতিনের চিপ থেকে দারুণ এক হেডে গোল করেন ইয়োকা। এ গোলেই ম্যাচ জয়ের সাথে সাথে দ্বিতীয় সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কাপের সেমিফাইনালও নিশ্চিত করেছে সিলেট। সাফ অনুর্ধ্ব-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত খেলা সাদ উদ্দিন এ দিন খেলেছেন সিলেট জেলা দলের হয়ে। তবে ম্যাচের প্রথমার্ধে তার পায়ের কারুকার্য দেখা যায়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে সাফ অনুর্ধ্ব-১৬ এর স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন সাদ। লেফট উইং দিয়ে টানা কয়েকবার প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে ভয় ধরিয়েছেন। সিলেট জেলা দলের হয়ে জাতীয় ফুটবল ওয়াহেদও খেলেছেন। তবে পুরো ম্যাচেই নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন তিনি। খেলা পরবর্তী ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৃনাল কান্তি দেব, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) সিলেট বিভাগ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও মৌলভীবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মো. কামরুল হাসান এবং মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মেঃ ফজলুর রহমান। উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের ডিডিএলজি দেবজিৎ সিনহা, মৌলভীবাজারের ডিডিএলজি মো. জাকারিয়া, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক ) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও কোষাধ্যক্ষ শাহিদ আহমদ চৌধুরী জুয়েল, মৌলভীবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক মিসবাহুর রহমান, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি হেলাল আহমদ, সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য বিজিত চৌধুরী ও এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য সুমাত নুরী চৌধুরী জুয়েল, ফরহাদ কোরেশী, সৈয়দ তাকরিমুল হাদী কাবি।
ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ মনোনীত হয়েছেন সিলেট জেলা ফুটবল দলের বিদেশী খেলোয়াড় অকোচা। ম্যাচ পরিচালনা করেন মো. ইমাম হোসেন, শেখ কামাল আহমদ, ফেরদৌস আহমদ ও আনোয়ার হোসেন সাজু। ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারটি লন্ডন টাইগার্স-এর সৌজন্যে প্রদান করা হয়। ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিলেট জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অফিস সেক্রেটারী বিপুল চন্দ্র তালুকদার। উক্ত টুর্নামেন্টের স্পন্সর প্রাণ-আরএফএল এবং কো-স্পন্সর সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড।
আজকের ম্যাচ : নারায়ণগঞ্জ জেলা দল বনাম নরসিংদী জেলা দল