• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দোয়ারাবাজারে খাসজমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ!

sylhetsurma.com
প্রকাশিত আগস্ট ২০, ২০১৬

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি :::: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সরকারি খাসজমি ও নদীর চর দখল করে বসতবাড়িসহ অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সীমান্তঘেঁষা বাংলাবাজার ও নরসিংপুর ইউনিয়নের মরাগাঙ্গ, চেলা, মরাচেলা ও চলতি নদীর চরে অসংখ্য স্থাপনা গড়ে উঠলেও প্রশাসন নির্বিকার। দখলদাররা বলছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এসব নির্মাণ করেছে। প্রভাবশালীরা দখল করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে শুধু কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদই বেহাত হচ্ছে না, নদীর গ্রোতধারা ও গতি পরিবর্তনে এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ঢলের তোড়ে উজান থেকে নেমে আসা নদীবাহিত বালুতে ফসলি জমি ভরাট হয়ে জেগে উঠছে চর। ফলে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠছে ফসলি জমি। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে সরকারি খাসভূমিতে ব্যাঙয়ের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হাটবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে ও নদীর তীরে সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা। দখলদাররা বেচাকেনাসহ মালিকানা প্রতিষ্ঠা করলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন উচ্ছেদের নামে কিছু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে এলেও এর কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সরকারি ভূমিতে গড়ে ওঠা বৃহদাকার অবৈধ স্থাপনাগুলো থাকছে বহাল তবিয়তে।
অভিযোগ রয়েছে, ভূমি ও তফশিল অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সরকারি জমি ভোগদখলসহ লাখ লাখ টাকায় বেচাকেনা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে একটি অসাধু চক্র খাসজমি, বাজারভিট ও নদীর চর বন্দোবস্ত দেয়ার নামে বিত্তবান প্রভাবশালীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছেন। বাংলাবাজার ইউনিয়নের বরইউড়ি মৌজার ১নং খতিয়ানের ১নং দাগে এক প্রভাবশালীর দখলে রয়েছে ৬০ শতক সরকারি জমি। বর্তমানে এখানে বহুতল ভবনও নির্মিত হয়েছে।
এছাড়া বাংলাবাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চেলা নদীর শাখা মরা গাঙ ও তার চর দখল করে অনেক ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল কাদির ওরফে ফালান মেম্বার ওই নদী দখল করে একাধিক বাড়িঘর তেরি করেছেন সেখানে। একইভাবে রহিমাপাড়া মৌজাস্থিত নরসিংপুর বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মরাচেলা নদীর চর পর্যন্ত ও গড়ে উঠেছে বহুতল বিশিষ্ট ইমারতসহ অনেক দোকানপাট। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় ওই বাজারে সরকারি ভূমির নির্মিত হচ্ছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। পরে ব্যবসায়ীদের কাছে এ দখলকৃত ভূমি বেচাকেনাও হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ আড়াই যুগ ধরে উপজেলার এসিল্যান্ড পদটি শূন্য থাকায় দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় সহকারী কমিশনা (ভূমি) না থাকায় অন্তহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লোকজন। এই সুযোগে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের ইচ্ছেমাফিক দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ বছর চারেক আগে উপজেলার বাংলাবাজার ও নরসিংপুর বাজারে সরকারি ভূমিতে অবৈধ স্থাপনাসহ বাজারের পাশ ঘিরে বয়ে যাওয়া নদীর চরে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রশাসন। সে সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দোয়ারাবাজারের ইউএনও জিয়া উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে বাজারের আংশিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পরে আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অপরদিকে নদী বা চরের শ্রেণী পরিবর্তন ছাড়া সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার বিধান না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালীদের নামে বন্দোবস্ত দেয়া হয়।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে, বিগত বছরগুলোতে নদী ও সরকারি খাসজমির অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে গ্রহণ করা উৎকোচের লাখ লাখ টাকা বড়কর্তা, সার্ভেয়ার, কানুনগো, ভূমি ও তহশিল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তাদের সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়ে থাকে।
ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, হাটবাজারসহ সরকারি ভূমি, নদী ও চর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে ইতিমধ্যে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে শিগগির আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।